আদালত পর্যবেক্ষণ ও আলেমদের মতামত ‘ইমামরা কখনই আইন নিজের হাতে তুলে নেন না’
হুমায়ুন আইয়ুব: ইমামরা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কখনই তারা আইন নিজের হাতে তুলে নেন না। দেশের বিশেষজ্ঞ আলেমদের দায়িত্ব হলো ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা মানুষের সামনে তুলে ধরা, অপরাধীর শাস্তি কী হবে বলে দেওয়া, শাস্তি প্রয়োগ বা বিচার কার্যকর করা কখনই আলেম বা মুফতির দায়িত্ব ছিল না; এখনো না। সুতরাং ইমামরা সবসময় ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা বলেছেন এবং বলবেন বলে মনে করেন ঢাকার কুঁড়িল বিশ^রোড শায়েখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপচিালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ।
রোববার বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেনের যৌথ বেঞ্চ গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকা-ের রায় ও পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনা করে মুফতি মিযানুর রহমান এসব কথা বলেন। আদালত বলেছেন, একজন মসজিদের ইমামের দায়িত্ব হলো মুসলমানদের কাছে ইসলামের সঠিক জ্ঞান পৌঁছে দেওয়া। তিনি এমন কোনো জ্ঞান বা বয়ান দেবেন না, যা প্রচলিত ফৌজদারি আইনের পরিপন্থী।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, যদি কেউ ইসলাম ধর্ম, হজরত মুহাম্মদ (স.) বা অন্য কোনো ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করে বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক বা গণমাধ্যমে প্রকাশ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।
মুফতি মিযান আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, আদালতের পর্যবেক্ষণে আমি কোনো সমস্যা বা ক্ষতিকর দিক দেখছি না। ইমামরা প্রচলিত আইন মেনেই সব কাজ করেন। সবকিছু বলেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির আপাতত সুযোগ নেই।
তবে আদালত পর্যবেক্ষণে ইমামদের লক্ষ্য করে বলা ‘আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই’ বিষয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, এমন কোনো উদাহারণ কী আছে যে আলেম বা ইমামরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন? তাহলে শুধু ইমামদের উদ্দেশে কেন পর্যবেক্ষণ দিতে হবে? ইমামরা কখনই আইন নিজের হাতে তুলে নেন না। এমনকি কাউকে আইন হাতে তোলে নেওয়ার জন্য উৎসাহিতও করেন না। দেশের সর্বোচ্চ বিচারবিভাগ নিশ্চয় আরও দায়িত্বশীলভাবে কথা বলবেন, যাতে সমাজে ভুল বোঝাবুঝি বা অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি না হয়।
তবে হ্যাঁ, এদেশের সাধারণ মানুষের ধর্মবিশ^াস ও আবেগ-অনুভূতিতে রাজত্ব করেন ইমামরা। ইমামরা কখনই ইসলামের ভুল ব্যাখা মানুষকে দিবেন না, সেই অনুরোধ আমিও করব।
এ বিষয়ে ইসলামি ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ইসলামি আইনও বলে, বিচার নিজ হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। আলেম সমাজ দেশের আইন-বিচারবিভাগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে আদালত পর্যবেক্ষণে বলা, যদি কেউ ইসলাম ধর্ম, হজরত মুহাম্মদ (স.) বা অন্য কোনো ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করে বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক বা গণমাধ্যমে প্রকাশ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে কথাটায় কোনো সমস্যা দেখছি না। কিন্তু এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ, আলেম সমাজ দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছেন, জাতীয় সংসদে ধর্ম অবমাননাকারীর জন্য কঠোর আইন পাসের। এই দাবি জানানোর তো নাগরিক হিসেবে সবার অধিকার আছে। এই দাবি জানানো বা দাবির পক্ষে জনমত তৈরি কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া নয়। সম্পাদনা: গিয়াস উদ্দিন আহমেদ