মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে অকাল বন্যায় বোরো ফসল তলিয়ে গেছে, এবার তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট
স্বপন কুমার দেব ও সোহেল রানা, মৌলভীবাজার : হাকালুকি হাওরের ধলিয়া বিলে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন কৃষক মুছা মিয়া (৫৫)। জানালেন এবার আর কাচি নিয়ে ধান কাটতে বোরো ক্ষেতে নামতে হবে না। একটি ধান গাছের পাতাও রাখেনি অকাল বন্যায়। নিজের বছরের খাবারের পর অতিরিক্ত ২০-৩০ মন ধান তিনি বিক্রি করেন। অথচ এবার ধান বিক্রি তো দুরের কথা, সারা বছর কিভাবে স্ত্রী সন্তানের মুখে দুমুটো ভাত তুলে দিবেন সেই চিন্তায় দিশেহারা।
একই অবস্থা কুষক আব্দুল হাসিম, আব্দুল মন্নান, আব্দুল মালিক, মদন নাথের। সবার একটাই কথা, গত বছর বৈশাখ মাসে বন্যা হয়েছিলো। এবার চৈত্র মাসের মাঝামঝি থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে অকাল বন্যায় তলিয়ে গেলো সারা বছরের একমাত্র ক্ষেত বোরো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, অতি বর্ষনে মৌলভীবাজারের হাকালুকি, কাউয়াদীঘি, হাইলহাওরসহ জেলার নিম্নাঞ্চলের ১৪ হাজার ৮৬২ হেক্টর বোরো ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এ পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। এ বছর জেলায় বোরো ফসল আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৬২ হেক্টর। জানা গেছে, সাধারণত এ মৌসুমে ১০-১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
হাকালুকি হাওর তীরের জয়চন্ডী, ভুকশিমইল, বরমচাল ও ভাটেরা ইউনিয়নের মানুষ জানান, চৈত্র মাসে এমন অকাল বন্যা কোনদিন দেখেন নি তারা। যদি পাহাড়ী ঠলে বোরো ধান তলিয়ে গেলেও কোন কথা ছিলো না। এখন বন্যা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তা ঘাট। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে মানুষ।
ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, এই অঞ্চলের মানুষ একমাত্র বোরো ক্ষেতের উপর নির্ভরশীল। একমুঠো ধান তুলতে পারেনি কোন কৃষক। ফলে এবার হাকালুকি হাওর তীরের মানুষের মাঝে তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে।