ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করার প্রস্তাব বাংলাদেশ আপাতত চুক্তি নয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর চায়
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাচ্ছেন আগামীকাল। সফরকালে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কাছে এই সংক্রান্ত একটি খসড়াও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো সামরিক চুক্তি করতে রাজি হয়নি। বাংলাদেশ সরাসরি চুক্তি নয়, আগে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে চায় এবং পরে চুক্তি করবে। তবে তা কখন করা হবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও ভারত আশা করছে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরেই সমঝোতার ভিত্তিতে সামরিক চুক্তি হবে। চুক্তি করে ভারতীয় বাহিনী সরাসরি বাংলাদেশে এসে অভিযান চালানোর সুযোগ চায়। তবে বাংলাদেশ এতে রাজি নয়। এই কারণে আপাতত চুক্তি করবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত বাংলাদেশকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে চায়। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ আপাতত চুক্তি নয়, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে আগ্রহী। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ভারতীয় সেনাপ্রধানের ৩ দিনের সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্পষ্ট করে দিয়েছে আসলে বাংলাদেশ এখন কি চাইছে। কারণ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ভারতীয় সেনাপ্রধান দেখা করার পর রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণ বিনিময় আরও বাড়বে। এর মাধ্যমে সহযোগিতা আরও সম্প্রসারিত হবে এবং বাড়বে। দুই দেশের সেনাবাহিনী প্রধান ভারত ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান প্রশিক্ষণ ও পেশাগত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। কারণ দুই দেশের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পর্যায়ে সফর বিনিময় উভয় দেশের সেনাবাহিনীরই পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিনিময়ের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান। ভারতীয় সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের মাটি যাতে ভারতের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেন। কারণ ভারতের আশঙ্কা, চীন বাংলাদেশকে প্রয়োজনে ভারতের বিপক্ষে ব্যবহার করতে পারে। আর সেই আশঙ্কা থেকেই ভারত বাংলাদেশে সামরিক শক্তি বাড়াতে আগ্রহী। এই জন্য প্রয়োজনে ভারত বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেবে। যাতে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে সামরিক অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও ট্রাক কিনে। তবে বাংলাদেশ এখনো ভারত থেকে সামরিক অস্ত্র কেনার ব্যাপারে আগ্রহী নয়।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি হুট করে করা ঠিক হবে না। কারণ কোনো দেশের সঙ্গেই এখনো এই চুক্তি নেই। আপাতত বাংলাদেশের করারও প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বাজায় রাখতে চায়। কারণ বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না।
সূত্র জানায়, ভারত যে চুক্তি করতে চায় সেখানে এমন একটি ক্লজ থাকতে পারে যে, ভারতীয় সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর সদস্যরা প্রয়োজন হলে বাংলাদেশে আসতে পারবে এবং অভিযান পরিচালনা করতে পারবে। কিন্তু তা এদেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর জন্য ইতিবাচক হবে না। বরং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা ও সমুন্নত রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার তিন বাহিনীকে আধুনিকায়ন করছে। এই কারণে বাংলাদেশ অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছে। যদিও ভারতের তরফ থেকে চাপ রয়েছে বাংলাদেশ অস্ত্র ও সামরিক বাহিনীর কাজে ব্যবহার হয় এমন সরঞ্জামাদি কেনার। পাশাপাশি ভারতের আশঙ্কা আগামী দিনে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের পক্ষে একা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। সেজন্যই ভারতীয় সামরিক বাহিনী সহায়তা দিতে চায়। সেই জন্য চুক্তি প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, ভারত চাচ্ছে অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশের মাটি ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইলে যাতে করে ভারতীয় সামরিক বাহিনী তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য সহায়তা করতে পারে। সেই জন্য ভারতীয় সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে অবাধে আসতে পারে।
সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে এখন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিষয়ে কর্মকা- রয়েছে। এই জন্য প্রতি বছর একটি রূপরেখাও তৈরি করা হয়। সেই হিসাবে এক বছরের কাজ চলে। সম্পাদনা: গিয়াস উদ্দিন আহমেদ