প্রবৃদ্ধি অর্জনে অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি
জাফর আহমদ: অর্থনীতির অন্যতম চালকের আসনে আসছে অভ্যন্তরীণ বাজার। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি, প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো আয় ও কৃষি প্রবৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করলেও এসবের অবদান কমে আসছে। ফলে রেমিটেন্স ও পোশাক রপ্তানি নির্ভর প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করা হয়েছিল তা পূরণ হচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ চালকের আসনে যোগ হচ্ছে দেশের ভেতরের মানুষের ব্যয় ও চাহিদা। এমন ইঙ্গিত করেছেন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ। এরই ধারাবাহিকতায় এবারে প্রাক্কলনকৃত প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ যৌক্তিক ছিল। সরকারের ব্যয়ও সেভাবে বাড়ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম কমে আসার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে রেমিটেন্স কমে গেছে। খুব তাড়াতাড়ি রেমিটেন্স বাড়বে বলেও আশা করা যাচ্ছে না। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ নয় মাসে রেমিটেন্স কমেছে ১৭ শতাংশ। ৯ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা মোট ৯১৯ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে দেশে এসেছিল ১ হাজার ১০৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে এই ৯ মাসে প্রবাসী আয় কমেছে ১৭ শতাংশ। রেমিটেন্সর সঙ্গে সঙ্গে কমছে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ও। চলতি জুলাই-মার্চ ৯ মাসে পোশাক রপ্তানি নেমেছে ২ দশমিক ৩৮ শতাংশে। এটা স্মরণকালের কম প্রবৃদ্ধি। বিশেষজ্ঞদের মতে, তৈরি পোশাক রপ্তানির সঙ্গে দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান, পল্লী অঞ্চলের অর্থ সরবারহ প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। রপ্তানি আয় কমার সঙ্গে সঙ্গে এসবের উপর প্রভাব পড়বে। বিজিএমইএ-এর সহ-সভাপতি মাহামুদ হাসানের মতে, বেক্সিট, আমেরিকার নির্বাচন, দেশে এ্যাকোর্ড-এ্যালায়েন্স এর রপ্তানি বিরুদ্ধ কার্যক্রম এবং বিদেশে তৈরি পোশাক ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ার প্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক খাতে এক দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শিগগিরই সম্ভব নয়।
এদিকে দেশের আবাদির জমিতে সর্বোচ্চ ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের এসব জমি থেকে আরও বেশি ফসল উৎপাদন করার আশা আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে আসছে। এখন কৃষি খাতে বেশি উৎপাদন করতে হলে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ও অনাবাদী জমির ব্যবহার বাড়াতে হবে। তবে এটা রাতারাতি সম্ভব নয়। ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও ব্যয় বাড়াতে হবে। এডিবি এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে।
এ ব্যাপারে এডিবির স্টাফ কনসালটেন্স মো. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের বিশাল জনশক্তি উৎপাদনে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তেমনি ভোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশেও তাই হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির কৌশলগত চালক হিসাবে আগামীতে অভ্যন্তরীণ বাজারে ভূমিকা রাখবে। সম্পাদনা: গিয়াস উদ্দিন আহমেদ