চমকে দিলেন মোদি, হাসিনাকে বরণ করতে বিমানবন্দরে সহযোগিতার সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প
বিশেষ প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও উম্মুল ওয়ারা সুইটি, ঢাকা : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন, ভারতের ভারি শিল্প ও পাবলিক এন্টারপ্রাইজ প্রতিমন্ত্রী ও জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। এটাই ছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিমান দিল্লির পালাম বিমান বন্দরে পৌঁছলে ঘটে অন্যরকম এক ঘটনা। সবাইকে অবাক করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে নিজেই এসে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। উল্লেখ্য, বিমানবন্দরে আসতে মোদির জন্য আলাদা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দরকার হয়নি। যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
জানা গেছে, সৌহার্দ্যের নজির হিসেবে মোদী নিজেই বিমানবন্দরে হাজির হয়ে হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে এই বিষয়ে বলেন, একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর প্রতি উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন মোদি। এরপর আর শেখ হাসিনার হাতে ফুল তুলে দেওয়ার ছবি টুইট করে মোদী লিখেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পেরে আমি আনন্দিত।
পরে আরেক টুইটে মোদী বলেন, আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি সংকল্পবদ্ধ।
দুই দেশের গণমাধ্যমগুলো শেখ হাসিনার এই অভ্যর্থনাকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে। বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা বিমানের সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলে নরেন্দ্র মোদী তার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে করমর্দন করেন। তারা দুজনে কুশল বিনিময়ের পর প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন বাবুল সুপ্রিয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এবং ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর শেখ হাসিনাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন মোদী।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন এবং দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর পালাম স্টেশন বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এসময় প্রধানমন্ত্রী লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ৪ দিনের এক সরকারি সফরে তিনি দেশটি সফরে যান।
পালাম স্টেশন থেকে প্রধানমন্ত্রীকে একটি সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রা সহকারে রাষ্ট্রপতি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সেখানে অবস্থান করবেন।
বিকেলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর সন্ধ্যায় দিল্লীস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রধানমন্ত্রীকে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীকে । সংবর্ধনায় কূটনীতিক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। পরে প্রধানমন্ত্রী ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধ পরিদর্শনে গিয়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
আজ ৮ হায়দ্রাবাদ হাউজে শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় দুই নেতা একান্তেও কিছু সময় অতিবাহিত করবেন। আলোচনার পর দুই নেতার উপস্থিতিতে একগুচ্ছ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। এসময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীর হিন্দি সংস্করণ উন্মোচন করবেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী।
বিকালে ম্যানেকশ সেন্টারে মহান মু্িক্তযুদ্ধে শাহাদৎবরণকারী ভারতীয় সৈনিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৭ শহীদ ভারতীয় সেনা পরিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননাপত্র প্রদান করবেন।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ভারতের উপ-রাষ্ট্রতি হামিদ আনসারির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
আগামীকালসকালে প্রধানমন্ত্রী আজমীর শরীফ যাবেন। সেখানে খাজা মঈনউদ্দিন চিশতি (রহঃ)-এর দরগাহ শরীফ জিয়ারত করবেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সাথে দেখা করবেন। পরে তিনি রাষ্ট্রতি প্রদত্ত এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
১০ এপ্রিল সকালে শেখ হাসিনা তাজমহল হোটেলে বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। বিকেলে তিনি ঢাকার উদ্দেশে দিল্লী ত্যাগ করবেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসার পর এটাই শেখ হাসিনার প্রথম ভারত সফর।
এরআগে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে হাসিনা ভারত সফর করেন এবং ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের মোদী বাংলাদেশ সফরে আসেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ভারতে গিয়েছেন।
একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান,পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে এফবিসিসিআই’র সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদলও সঙ্গে রয়েছেন।
তার এই সফরে ভারতের সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, পরমাণু বিদ্যুৎ, বিজ্ঞান ও প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিন ডজন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।