দুটি দেশ অনেক নিকটে এসেছে
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দুটি দেশ অনেক নিকটে এসেছে। দুটো দেশই এক অপরের নৈকট্যে যাওয়ার জন্য নানাবিধ কর্মকা- করেছে। যেমন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে ইলিশ মাছ, মিষ্টি, শাড়ি, ধুতি ইত্যাদি নিয়ে গেছেন। যেদিন তার সফর শুরু হয় সেদিন হিন্দু পত্রিকায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একটা লেখা ছাপা হয়েছে। যে লেখার শিরোনাম ব্যবহার করা হয়েছে কবিতার একটি পঙক্তি দিয়ে, ‘বন্ধুত্ব বহতা নদীর মতো’। এই শিরোনাম ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে বার্তাটি দিতে চেয়েছেন সেটি হচ্ছে এই যে, বন্ধুত্ব চলমান থাকতে হয়। চলমান বন্ধুত্বের আওতাতেই দুই পক্ষের মধ্যে সমস্যা, সংকট নিরসন হতে পারে। অন্যদিকে ভারতের দিক থেকে দেখা যাচ্ছে, বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের মনকে জয় করার জন্য। যেমনÑ বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির থাকার কথা ছিল না। কিন্তু রাষ্ট্রাচার উপেক্ষা করে কোনো নিরাপত্তা না নিয়ে বিমানবন্দরে তিনি উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স¦াগত জানিয়েছেন। বাংলাদেশকে আরও তুষ্ট করার জন্য দিল্লির পার্ক স্ট্রিটের নতুন নামকরণ করা হয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়ক’।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থেকেছেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। এ সবকিছুই উভয়ই উভয় পক্ষের কাছাকাছি যাওয়ার উদ্যোগ। এমন একটা নৈকট্য থাকলে অনেক সমস্যারই সংকট ধীরে ধীরে নিরসন করা সম্ভব। দুজন শত্রুর মধ্যে কখনো কোনো কিছু আদান-প্রদান করা হয় না, কোনো সমস্যার সংকটের নিরসন হয় না। যেমন পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো সংকট নিরসন হচ্ছে না। আর যে চুক্তি, সমোঝতা স্মারক সই হলো সেগুলো চলমান সহযোগিতারই রূপ। এর মাঝেও আমাদের কিছু অপ্রাপ্তি আছে। সেটি হচ্ছেÑ তিস্তা চুক্তি না হওয়া। মনে রাখতে হবে, শুধু তিস্তা নিয়েই কথা বললে হবে না, কথা বলতে হবেÑ ৫৪ নদীর ন্যায্য হিস্যা নিয়েই। এক্ষেত্রে একটা পটভূমিমূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারত যৌথ নদী কমিশন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, যৌথ নদী কমিশনের সভা বহুদিন ধরে হয়নি। এ রকম একটা সভা হলে হয়তো বা একটা পটভূমি তৈরি হতো।
আমি আশা করি, বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশেই যথেষ্ট যতœশীলভাবেই এই যৌথ নদী কমিশনের সভা যেন নিয়মিত হয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাত নিয়ে কথা বেশি হয়েছে। প্রতিরক্ষা খাত নিয়ে দুদেশের মধ্যে যে সহযোগিতা এখন বিরাজমান তা থেকে কিছুটা সম্প্রসারণ হলো মাত্র। বাংলাদেশকে অস্ত্র কেনার জন্য যে ৫০ কোটি ডলারের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তা থেকে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার ও প্রয়োজন অনুযায়ী অস্ত্র কিনবে এমন শর্ত আছে। বাংলাদেশের অস্ত্র সরবরাহের একমাত্র উৎস বর্তমানে চীন। সেক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে আমাদের চীনের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। সেই নির্ভরশীলতা থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসতে পারবে হয়তো। সামগ্রিক বিচারে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ইতিবাচক ও ফলদায়ক। ভবিষ্যতে তিস্তার জন্য আমাদের সতর্ক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি আশার বাণী উচ্চারণ করেছেন, হাসিনা-মোদির আমলেই তিস্তা চুক্তি সম্পাদন হবে। আমরাও আশা করছি, দুই প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে বা তাদের আমলেই এই চুক্তিটি সম্পাদন হবে।
পরিচিতি: ইতিহাসবিদ
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি/সম্পাদনা: আশিক রহমান