নাগেশ্বরীতে জনসাধারণের টাকায় নির্মিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য
এম এস সাগর, কুড়িগ্রাম: মুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের জনগণের প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে জেলার নাগেশ্বরীতে নির্মিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য। থানা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন বদ্ধকুপ ঘিরে ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভাস্কর স্থপতি অনিক রেজার নকশায় ভাস্কর্যে ব্যয় হবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।
গত ২৫ মার্চ জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে ২৫টি জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর ¯’াপন করেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. জাফর আলী। নাগেশ্বরীর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ উদ্যোগ ‘শেকড়’ দীর্ঘদিন থেকে বদ্ধকুপটি সংস্কার করে সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নাগেশ্বরী থানা ছিল পাকবাহিনীর নির্যাতনের কেন্দ্র (টর্চার সেল)। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে চিহ্নিত কুপটির কাছে নির্যাতন শেষে পুড়িয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে ফেলে যেতো। সে সময় প্রতিদিনই লোকজন ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। পরবর্তীতে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ালে ¯’ানীয়রা মৃতদেহগুলো তুলে কুপটিতে ফেলতো। যুদ্ধ পরবর্তীতে থানায় পুলিশ সদস্যরা আসলে তারাও বেশ কিছু কঙ্গাল এবং অর্ধগলিত মৃতদেহ কুপে ফেলা হয়। তারপর থেকে কুপটি মাটি দিয়ে বদ্ধ করে রাখা হয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তীতে কুপটি অচিহ্নিত এবং অবহেলায় পড়ে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ উদ্যোগ ‘শেকড়’ বদ্ধকুপটি চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করলে ইউএনও আবু হায়াত মো রহমতুল্লাহ কুপটি সংস্কার করে সেখানে ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী এবং সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে আলোচনা করেন। পরে এ উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প করে ভাস্কর্য নিমার্ণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হ”েছ। ভাস্কর ¯’পতি অনিক রেজা ভাস্কর্যের নকশা করেছেন। এতে ব্যয় হবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এসব টাকা উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ দান করছেন। এতে অংশ নিলে এবং সর্ব নিম্ন এক হাজার টাকা অনুদান দিলে তার নাম ভাস্কর্যের পাশে খোদাই পাথরে থাকবে বলে বাস্তবায়ন কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে শেকড় সভাপতি বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি বদ্ধকুপটি চিহ্নিত করে সেখানে একটি স্মৃতি স্তম্ভ করার। এবারে বিশাল ভাস্কর্য হ”েছ। এটি উপজেলাবাসীর জন্য গৌরবের। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার আবু বকর সরকার বলেন, এ ভাস্কর্য এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের পরম পাওয়া। সব মানুষ মনে রাখবে। মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রিয় কমান্ডের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি বলেন, ভার্স্কটি শুধু ভাস্কর্য নয়। এটি বহন করবে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ইতিহাস। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান