ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর নিয়ে জটিলতা এবং …
ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর নিয়ে পরিবেশ রক্ষায় সুদীর্ঘকাল ধরে লিখেই চলেছি। ট্যানারির মালিকদের ব্যর্থতা, শিল্পের জটিলতা, স্থানান্তরের দীর্ঘসূত্রিতা, হাজারীবাগে বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা ইত্যাদি। আমার লেখার বিষয় ছিল ট্যানারি স্থানান্তর, যা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে। সবকিছু এগিয়ে চলছিল, ট্যানারির উন্নয়ন হচ্ছিল, তবে আশানুরূপ নয়। ৩২ বার নোটিস নেওয়া হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত আদালতের অপেক্ষা করতে হয়েছে। আদালত বিসিক ও পরিবেশবাদীদের যুক্তিতর্ক আমলে নিয়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কাটার নির্দেশ দিয়েছেন, পরিবেশ অধিদফতর তাদের দায়িত্ব পালন করে সব লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ ছিল ট্যানারি শিল্পের লাইন বিচ্ছিন্ন করার। ট্যানারি ও ফুটওয়ার সম্পূর্ণ আলাদা শিল্প। পরিবেশ অধিদফতর লাইন কাটার সময় কোনো বাছ-বিচার করেনি বলে অনেক শিল্পপতি অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিল্পের মালিক বলেন, পরিবেশ অধিদফতর ট্যানারির লাইন কাটতে ফুটওয়ারের লাইনও কেটে দিয়েছে।
আমি মনে করি, আদালতের রায় অমান্য করা হয়েছে। এতে হাজার হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মহামান্য আদালতকে বিসিক ও পরিবেশবাদীরা ভুল তথ্য দিয়ে ট্যানারি শিল্পকে ধ্বংস করার পায়তারা করছেন। আমরা মনে করি, এটা গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ।
ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, হেমায়েতপুরে শ্রমিকের বাসস্থান, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি, গ্যাস ও বিদ্যুতের পরিপূর্ণ ব্যবস্থা না করেই হাজারীবাগ চামড়াশিল্প বন্ধ করায় হাজার হাজার শ্রমিক আজ মানবেতর জীবনযাপন করছে। সেই সঙ্গে ফুটওয়ার শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে, ট্যানারি শিল্পের চার স্তরÑ ওয়েট ভুলু, ক্রাশ, ফিনিক্স ও ফুটওয়ার।
ওয়েট ভুলু আর ক্রাশ বন্ধ করলেই পরিবেশ উন্নয়ন হয়ে যেত, আদালত পরিবেশ রক্ষা ট্যানারি শিল্পের লাইন কাটার নির্দেশ দিয়েছেন, ট্যানারি মালিকরাও মেনে নিয়েছেন। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর কোনো বাছ-বিচার না করেই ফুটওয়ারের বাসা বাড়ির লাইনও কেটে দিয়েছে। এতে হাজারীবাগ এখন ভুতুড়ে নগরী হয়ে পড়েছে। এত বড় একটি শিল্পনগরীর একটি বাতি জ্বালানোর মতোও কোনো ব্যবস্থা নেই। জাতীয় সম্পদ চামড়া চোর-ডাকাতদের কাছ থেকে রক্ষা করার কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। রপ্তানির তিন নম্বর খ্যাত চামড়া আজ অসহায়। আদালত ১৫ দিনের সময় দিয়েছে বিসিককে, হেমায়েতপুরে গ্যাস, বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দিতে, ধলেশ্বরী নদী দূষণমুক্ত রাখতে। ট্যানারির মালিকরা আশার আলো দেখতে পেয়েছেন, আদালত জরিমানার টাকাও মাফ করে দিয়েছেন। ট্যানারি লাইন কাটার পর থেকে মালিকরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন, কাঠগড়ায় এখন বিসিক ও পরিবেশ অধিদফতর ১৫ দিনের মধ্যে লাইন দিতে হবে, জানি না কি করে সম্ভব। না দিতে পারলে রপ্তানির কি হবে।
প্রিয় পাঠক, আমি আমার লেখায় বহুবার উল্লেখ করেছিলাম চামড়াশিল্পের মালিকদেরকে দুই ভাগে আনতে হবে, সফল মালিকদের সহায়তা করতে হবে। হেমায়েতপুরে যাওয়ার জন্য যে কয়দিন সময় লাগে তা তাদের দিতে হবে, ইতোমধ্যে শত শত কোটি টাকা তারা ব্যয় করে ট্যানারি শিল্প গড়ে তুলেছেন, যন্ত্রপাতি নিতে যদি কিছুদিন সময় দেওয়া হতো তবে রপ্তানি বন্ধ না করেও ট্যানারি স্থানান্তরিত করা যেত। আর যারা এখনো ট্যানারির কাজ করতে পারেননি তাদের হাজার বছর সময় দিয়ে কি হবে, যে কারণে বিচারের আগে পরিবেশবাদীরা ও বিসিক দুই ভাগ করে ট্যানারি মালিকগণকে আদালতের কাছে উপস্থাপন করতে পারতেন। কিন্তু বিসিক ভুল তথ্য দিয়ে আদালতে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করছেন। জনগণ, সরকার ও আদালত প্রভাবিত করে নিজেরাই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। ১৫ দিনের মধ্যে বিসিক যদি লাইন দিতে ও ট্যানারি মালিকরা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে চামড়া শিল্পের কি হবে? হাজার হাজার শ্রমিক কোথায় যাবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য সারা পৃথিবীর বাজারে বিস্তার করবে কিভাবে? জাতির জনক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দিকে তাকিয়ে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ভয়ের কিছু নেই। আমার চা, চামড়া, পাট আছে, তাই দিয়ে আমি দেশ গড়ে তুলব। আজ সেই চামড়াশিল্প প্রশ্নের মুখে। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সামনে পবিত্র রমজান। মাংসের মূল্য বেড়েই চলছে। কাঁচা চামড়া বিক্রয় করতে না পারলে মাংসের দাম আরও বেড়ে যাবে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি সরকার ভেবে দেখবে কি?
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান