কাশ্মীরি যুবককে গাড়িতে বেঁধে ‘মানবঢাল’ বানাল সেনারা, তীব্র ক্ষোভ
ডেস্ক রিপোর্ট : ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে সেনাবাহিনীর জিপের সামনে এক যুবককে বেঁধে বিভিন্ন স্থান ঘোরানোর অভিযোগে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানকার আন্দোলনরত জনতা যাতে সেনাবাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে না পরে সেজন্যই ওই যুবককে ঢাল করা হয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এ সংক্রান্ত এক ভিডিওচিত্র গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে উঠতেই ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পার্সটুডে
রাজ্য প্রশাসনের তদন্তে প্রকাশ, ৫৩ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ানরা ওই ঘটনায় জড়িত। ওই ঘটনায় কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার বার্তায় বলেছেন, ‘পাথর থেকে বাঁচতে সেনাবাহিনী একটি মানুষকে ঢাল বানাল কী করে? আমি হতবাক!’ তিনি ওই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত দাবি করেছেন। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ভিডিওটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেছেন, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাডগামের সিতাহরন গ্রামের বাসিন্দা ফারুক দার (২৬) তদন্তকারীদের বলেছেন, তিনি এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার পথে জওয়ানেরা তাকে আটক করে। সেনা ইউনিটটি নির্বাচন কর্মীদের সঙ্গে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করছিল। তাকে জিপে বেঁধে ৯টি গ্রামে ঘোরানোসহ মারধরও করা হয়। কিন্তু সেনা সূত্রের দাবি, ১০০ মিটার পরেই ফারুককে ছেড়ে দেয়া হয়। গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে ফারুক বলেছেন, তিনি জীবনে কখনো পাথর ছোড়েননি। তিনি পাথর ছোঁড়া লোক নন, বরং কাশ্মিরে কিছু ছোটখাটো কাজ করেন। ফারুকের পরিবারে তার ৭৫ বছর বয়সী অসুস্থ বৃদ্ধা মা রয়েছেন। তিনি শালে নকশা করার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
গত ৯ এপ্রিলের ওই ঘটনার পরে ফারুক এবং তার মা ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। এমনকি তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পর্যন্ত করতে চান না। ফারুক বলেন, আমরা গরীব মানুষ কী অভিযোগ করব? এ নিয়ে আমি কিছু করতে চাই না। ভয়ের মধ্যে আছি। আমার সঙ্গে কিছু হয়ে যেতে পারে। ফারুকের মা বলেছেন, এ নিয়ে তদন্তের কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা গরীব মানুষ। আমি ওকে হারাতে চাই না। বৃদ্ধ বয়সে সে-ই একমাত্র আশ্রয়।
এর আগে অন্য একটি ঘটনায় শ্রীনগরে উপ-নির্বাচনের দিন সিআরপিএফ জওয়ানদের মারধর করার ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওচিত্র গণমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় বিভিন্নমহল থেকে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। কিন্তু সেনাবাহিনী যেভাবে ফারুককে জিপের সামনে বেঁধে ঘোরানো হয়েছে সে প্রসঙ্গে কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘জওয়ানদের হেনস্থা নিয়ে দেশ জুড়ে যে পরিমাণ ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, জিপে বাঁধা যুবককে নিয়ে কিন্তু সেটা হবে না।’
এদিকে, অন্য একটি ঘটনায় শ্রীনগরে উপনির্বাচনের দিন পাথর ছুঁড়ে বিক্ষোভকারী এক তরুণের মাথায় গুলি করার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। পুলিশ ওই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে। দোষী প্রমাণিত হলে ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের ওই জওয়ানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জম্মু-কাশ্মির পুলিশের মহানির্দেশক এস পি বৈদ্য বলেছেন। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ