জামায়াত প্রশ্নে নিরব খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্য গড়তে বিএনপিকে পরামর্শ বিশিষ্টজনদের
শাহানুজ্জামান টিটু : জঙ্গি ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় ঐক্য’ সৃষ্টির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পরিস্থিতি পর্যালোচনা, করণীয় ও পরামর্শ নিতে বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ মতবিনিময় করেন তিনি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে জাতীয় ঐক্য গড়তে বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীরা খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছেন বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজ উদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার এই বৈঠক জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার ব্যাপারে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপি নেত্রীকে পরার্মশ দেন। তিনি বলেছেন, জোটের মধ্যে জামায়াত যে অবস্থানে রয়েছে সেখানে ড. কামাল হোসেন ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন দল দুটি বিএনপির আহ্বানে সাড়া নাও দিতে পারে। তার এই বক্তব্যের সর্মথন জানান দেশের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক। তবে তিনি নিজে থেকে জোরালোভাবে জামায়াত ছাড়ার ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেননি। দুজন ছাড়া আর কেউ জামায়াত প্রসঙ্গে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার ব্যাপারে খালেদা জিয়া কোনো মন্তব্য করেননি। এবিষয়ে তিনি নিরব ছিলেন। জাতীয় কনভেশনের ব্যাপারে ইতিবাচক বক্তব্য আসে বৈঠকে।
খালেদা জিয়া উপস্থিত বিশিষ্টজনদের উদ্দেশ্যে বলেন, যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। মানুষের সামনে সত্য তুলে ধরতে হবে। জঙ্গিবাদ ও হামলা করাচ্ছে বর্তমান সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য, এসব বিষয় মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের যে আহ্বান তিনি জানিয়েছেন এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে চান। এজন্য সকল পেশাজীবীর সহযোগিতা চেয়েছেন। বৈঠকে তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল ও সব মহলের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বসবো। তাদের মতামত নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এসময় তিনি দুই একটি দলকে ডাকার ব্যাপারে পেশাজীবীদের সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে বলে জানান।
সূত্র জানায়, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক লীগকে আমন্ত্রণ জানানোর পর তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পেশাজীবীদের সহযোগিতা করার কথা বলেছেন খালেদা জিয়া।
পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে বিএনপি নেত্রীকে জানানো হয়, জাতীয় ঐক্যের যে ডাক তিনি দিয়েছেন এটা সময়োপযোগী। জনসাধারণের মধ্যে একটা পজেটিভ ইমপেক্ট রয়েছে। দেশের মানুষ তার এই আহ্বানকে ভালোভাবে নিয়েছে। দেশের যে অবস্থা এই অবস্থার মধ্যে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে এই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এছাড়া সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনদের মধ্যে মেজর জেনারেল(অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, রাজিয়া আক্তার বানু, মোস্তাহিদুর রহমান, আমজাদ হোসেন, গাজী মাযহারুর আনোয়ার, মহিউদ্দিন আলমগীর (সম্পাদক দৈনিক নয়াদিগন্ত), এ জেড এম তাহমিনা, আমির খসরু, আবুল আসাদ (সম্পাদক দৈনিক সংগ্রাম), বিএফইউজের এম আবদুল্লাহ, ড. সদরুল আমিন, ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, ড. বোরহান উদ্দিন খান, আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, আ ন হ আকতার হোসেন, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, আনোয়ারুন্নবী বাবলা, কৃষিবিদ হাসান জাফরি তুহিন, শওকত মাহমুদ, গাজী রুহুল আমিন, এ এস এম আব্দুল হালিম, সুজাউদ্দিন আহমেদ, আব্দুুল কাইয়ুম, খন্দকার মাহবুব হোসেন, সানাউল্লাহ মিয়া, বোরহান উদ্দিন, ড. মামুন আহমেদ, ড. ওবায়েদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আমির খসরুর মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বুধবার ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রক্রিয়া নিয়ে দলের শীর্ষ নেতা এবং ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম