নওয়াজকে অভিশংসনের যথেষ্ট প্রমাণ পায়নি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট
ইমরুল শাহেদ : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবার পানামা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার এক বছর পর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার জানতে চেয়েছে, কিভাবে পানামা কেলেঙ্কারি পাকিস্তান থেকে অর্থপাচার হয়ে কাতার গেল।
আদালতের আদেশে একটি যৌথ তদন্ত টিম গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই টিম প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর পাঁচজন বিচারক নিয়ে গঠিত বেঞ্চের কাছে হাজির করবে। সুপ্রিম কোর্ট আরও নির্দেশ দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং তার দুই পুত্র হাসান ও হোসেন যেন যৌথ তদন্ত টিমের কাছে হাজির হন। ৫৪০ পৃষ্ঠার রায়ে আদালতের পাঁচজনের বেঞ্চ দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষে ছিলেন তিন জন এবং অন্যপক্ষে ছিলেন দুই জন।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর প্রধান বিচারপতি মিয়া শাকিব নিসার বলেন, ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিটি ব্যুরোর (এনএবি) চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। এফআইএ, এনএবি, এসইসিপি, এসবিআই, আইএসআই এবং এমআইয়ের একজন করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়ে গঠিত কমিটি সম্পদের তদন্ত করবে। বিচারপতি আসিফ সাঈদ খোসার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই বেঞ্চ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলার রায় স্থগিত রেখেছিলেন।
আদালতের রায় এমন একটা সময়ে এলো যখন আগামী বছর সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির উন্নয়ন শুরু হয়েছে। নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় পানামানিয়ান ল’ ফার্ম মোশাক ফনসেকা থেকে ১১.৫ মিলিয়ন গোপন নথি প্রকাশ হয়ে পড়ার পর। এখান থেকে বিশ্বের অনেক ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গোপন অর্থের সন্ধান পাওয়া যায়।
এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অভিশংসিত করার মতো যথেষ্ট পরিমাণ তথ্যপ্রমাণ পায়নি পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট।
উল্লেখ করার বিষয় হলো, ২০১২ সালে ইউসুফ রাজা গিলানিকে আদালত অবমাননা মামলায় প্রধানমন্ত্রীর পদে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। তাই দেশটির বিরোধীদলগুলো আশা করেছিল, নওয়াজ শরিফের বেলায়ও ঠিক তাই হতে পারে। তাদের আশা, পারিবারিক দুর্নীতির কারণে আদালত তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে অযোগ্য ঘোষণা করবে।
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ কোনো অন্যায় করেননি দাবি করলেও পানামা পেপার্স নিয়ে তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা চালাতে সম্মত হয় সুপ্রিম কোর্ট। কারণ, ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক হওয়া ইমরান খান হুমকি দিয়েছিলেন, এই মামলা গ্রহণ না করলে রাজপথ ছাড়বে না তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল উভয়েই আশাবাদী ছিলেন, রায় তাদের পক্ষে যাবে। নওয়াজ শরিফের দলের প্রভাবশালী নেতা তালাল চৌধুরী বুধবার ‘জিও টিভি’তে বলেছেন, ‘রায় আমাদের বিরুদ্ধে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকার ও আমাদের পুরো নেতৃত্ব নিয়মানুযায়ী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।’ তবে আদালতের রায় প্রতিকূলে গেলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী করা যেতে পারে, নওয়াজের দল তা নিয়েই মাথা ঘামাচ্ছে। নওয়াজ প্রধানমন্ত্রীর পদ হারালে সম্ভাব্য কী করতে পারে, তার ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে তার দলে। তবে দলে দুই ধরনের মত পাওয়া যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর পদ হারালে আগাম নির্বাচন দেওয়া। দলের একাংশের নেতারা মনে করেন, আগাম নির্বাচন না দিলে এই ইস্যু কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করে ফায়দা তোলার চেষ্টা করতে পারেন ইমরান খান। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত হলেও আগাম নির্বাচন দেওয়ার কোনো কারণ নেই। ২০১৮ সালে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচনের পক্ষে দলের একাংশের নেতারা। তাদের মতে, নওয়াজ ক্ষমতার বাইরে থাকলে তাতে দল আরও চাঙ্গা হবে।
এছাড়া পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি বলেছিলেন, পানামা পেপার দুর্নীতি মামলার রায় যদি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পক্ষে না যায় তবে তাকে পদত্যাগ করা উচিত। তিনি পাকিস্তানের জিও টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন। সূত্র : জিও টিভি, সম্পাদনা: এম রবিউল্লাহ