গোল্ডেন বাংলাদেশ প্রকাশিত ‘আয়কর বিষয়ে অগ্রিম প্রস্তুতি নির্দেশিকা’
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: ১ জুলাই থেকেই ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমার সময় শুরু হয়ে গেছে। এ সময়সীমা শেষ হবে আগামী ৩০ নভেম্বর। সেই দিনকে কর দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পাঁচ মাস সময় থাকলেও করদাতাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। সংগ্রহ করতে হবে নানা ধরনের কাগজপত্র।
এবার আপনি রিটার্ন জমা দেবেন ২০১৫-১৬ আয় বর্ষের। অর্থাৎ ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত যে আয় আপনি করেছেন; এর ওপর ভিত্তি করেই রিটার্ন জমা দিতে হবে। করযোগ্য আয় থাকলে টাকা দিতে হবে।
করদাতাদের সুবিধার জন্য প্রতিবারের মতো এবারও ‘আয়কর বিষয়ে অগ্রিম প্রস্তুতি নির্দেশিকা’ প্রকাশ করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন বাংলাদেশ। এটির সম্পাদনা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। ২০১৬-১৭ করবর্ষে কীভাবে একজন করদাতা আয়কর বিবরণী তৈরি করবেন, এর বিস্তারিত রয়েছে এই প্রকাশনায়। এ নির্দেশিকা অনুসরণ করে একজন চাকরিজীবী কীভাবে আয়কর বিবরণী প্রস্তুত করবেন, এর বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। শুধু বেতন-ভাতাই যদি কোনো করদাতার আয়ের একমাত্র উৎস হয়, তবে ওই করদাতার আয়কর বিবরণী তৈরি করা তুলনামূলক সহজ। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, রহমান সাহেব একজন সরকারি কর্মকর্তা। ২০১৫-১৬ আয় বর্ষে তাঁর মূল বেতন ২১ হাজার টাকা। এ ছাড়া চিকিৎসাভাতা পান মাসে ৭০০ টাকা। বছরে দুটি বোনাস পান। তিনি সরকারি বাসায় থাকেন। এর বাইরে তিনি প্রতি মাসে প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিলে ২ হাজার টাকা, কল্যাণ তহবিলে ৫০ টাকা ও গোষ্ঠী বিমায় ৪০ টাকা দেন। তাঁর বার্ষিক আয় ও কর গণনা করলে দেখা যায়, ১২ মাসের হিসাবে মূল বেতন ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা, বোনাস ৪২ হাজার টাকাসহ বার্ষিক মোট আয়ের পরিমাণ ২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে আড়াই লাখ টাকায় কোনো কর নেই। বাকি ৪৪ হাজার টাকার ১০ শতাংশ হারে করারোপ করলে তা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪০০ টাকা।
কিন্তু রহমান সাহেব যেহেতু ভবিষ্য তহবিল, কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমায় সারা বছর বিনিয়োগ করেছেন, সে জন্য কর রেয়াত পাবেন। ১২ মাসের জন্য ভবিষ্য তহবিলে জমা দিয়েছেন ২৪ হাজার টাকা। আর কল্যাণ তহবিলে ৬০০ টাকা ও গোষ্ঠী বিমায় ৪৮০ টাকা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫ হাজার ৮০ টাকা। চলতি অর্থবছরের জন্য অর্থবিলে কিছুটা পরিবর্তন এনে মোট আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করে কর রেয়াত নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। রহমান সাহেবের মোট আয় ২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ আয়ের ২৫ শতাংশ হলো ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। রহমান সাহেবের প্রকৃত বিনিয়োগ এর চেয়ে কম। এখন রহমান সাহেব কর প্রদানের সময় ২৫ হাজার ৮০ টাকার ১৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৭৬২ টাকা কর রেয়াত পাবেন। তাঁর মোট করের পরিমাণ থেকে এ টাকা বাদ দিতে হবে। তাহলে রহমান সাহেবের করের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬৩৮ টাকা। কিন্তু রহমান সাহেবকে ন্যূনতম কর দিতে হবে। ন্যূনতম করের পরিমাণ ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটিতে ৫ হাজার টাকা, অন্য সিটিতে ৪ হাজার টাকা এবং অন্য এলাকায় ৩ হাজার টাকা। এবার চাকরিজীবীদের মধ্যে যাঁরা বৈশাখী ভাতা পেয়েছেন, সেই ভাতার পরিমাণ বার্ষিক আয়ে যোগ করতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন আমানতের সুদের আয়ের অর্থ তুলে নেওয়ার সময় উৎসে কর কেটে রাখা হলেই তা মোট কর থেকে বাদ দিতে হবে। গৃহসম্পত্তি আয়: কোনো চাকরিজীবী বা করদাতার যদি গৃহসম্পত্তি থেকে আয় থাকে; তাও করের মধ্যে পড়বে। তবে গৃহসম্পত্তির মোট আয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অনুমোদিত নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বাড়িঘর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, দারোয়ানের বেতন, সিটি করপোরেশন বা পৌর কর বাদ দিতে হবে। এ ছাড়া এফডিআর কিংবা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে যে লভ্যাংশ পাওয়া যাবে, তা-ও মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।
মিলিয়ে দেখুন: শুধু আয়কর ও সম্পদ বিবরণীর ফরম পূরণ করে দিলেই হবে না। আয় কিংবা বিনিয়োগ করে কর রেয়াতের বিপরীতে বেশ কিছু কাগজপত্র আয়কর বিবরণীর দলিলের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
এ জন্য যেসব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে; সেগুলোর অন্যতম হলো বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌরকরের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট।
কোনো করদাতা যদি কর রেয়াত নিতে চান, তবে বেশ কিছু কাগজপত্র লাগবে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জীবনবিমার কিস্তির প্রিমিয়ার রসিদ, ভবিষ্য তহবিলে চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, স্টক বা শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিলে চাঁদা ও গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ, জাকাত তহবিলে চাঁদার সনদ।