‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জঙ্গি আস্তানায় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ, বিস্ফোরণ
ইসমাঈল হুসাইন ইমু ও সাহাবুদ্দিন সনু (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহনী শিবনগর গ্রামের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল বুধবার ভোরে ওই বাড়িটি ঘিরে রাখার পর সন্ধ্যায় অভিযান চালানো হয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অভিযান চলছিল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে জঙ্গি আবুর মা ফুলসানা বেগম ও চাচী চামেলী বেগমকে তার ছেলে আবুর বাড়িতে নেয়া হয়। এসময় তার মা ও চাচী তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বললে তারা কোন সাড়া দেয়নি। পরে তার মা চাচীকে তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। পরে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সোয়াত অভিযান শুরু করে। মুহুর্মুহু গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এরমধ্যে একটি বোমার শব্দ এসময় পাওয়া যায়। গণমাধ্যম কর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫’শ গজ দূরে রাখা হয়েছে। এর আগে এলাকার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। গোটা এলাকার বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। তবে সোয়াত নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় অভিযান চালায়।
কাউন্টার টেরোরিজমের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শিবগনগর এলাকায় বুধবার ভোর রাত ৩টার দিকে সাইদুর রহমান জেন্টু হাজী নামে এক ব্যক্তির বাড়ি ঘেরাও করে কাউন্টার টেরোরিজমের সদস্যরা। সকাল ৬টার দিকে ওই বাড়ি থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয় বলে ডিবি ইন্সপেক্টর সারওয়ার রহমান জানান। এরপর সকাল ১১টা থেকে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ওই এলাকায় যানবাহন, ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোঠা নিয়ে চলাচল নিষিদ্ধ করে মাইকিং করা হয়।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, ঘিরে রাখা বাড়িটির মালিক সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাস। সাইদুরের ছেলে আনারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তাদের বাড়িটি ফাঁকা পড়েছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে পরিবার নিয়ে বাড়িটিতে ওঠেন আবু। ভাড়ার বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ত্রিমোহনী শিবনগর গ্রামেরই বাসিন্দা আবু। ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে তাদের বাড়ি। তার বাবা আফসার আলী মা ফুলসানা বেগম।
ফুলসানা বেগম জানান, তাদের সঙ্গে আবু ও তার স্ত্রী সুমাইয়া খাতুনের বনিবনা হচ্ছিল না। এ কারণে আবু পরিবার নিয়ে বাড়ি ছাড়েন। প্রায় আট বছর আগে সুমাইয়ার সঙ্গে আবুর বিয়ে হয়। আবু হাটে-বাজারে মসলা বিক্রি করতেন। ত্রিমোহনী বাজারে তার একটা দোকানও আছে। আবুর চলাফেরা ও ধর্মীয় রীতিনীতি পালন নিয়ে বাবা আফসারের সঙ্গে মতবিরোধ চলছিল। একপর্যায়ে আবু শিবগঞ্জের আব্বাস বাজার এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন। আবু সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ পালন করতেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আবু ত্রিমোহনী আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন। স্থানীয় ৮-১০ জন ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরা করতেন তিনি। অন্যদের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তারা আলাদাভাবে নামাজ পড়তেন। সাইদুরের বাড়িতে ওঠার কিছুদিন আগে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজেদের বাড়িতে আসেন আবু। কিন্তু বাবার সঙ্গে ফের বিরোধ দেখা দেওয়ায় সাইদুরের বাড়িতে ওঠেন।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম বলেন, ভোরে ওই বাসায় গেলে ভেতর থেকে গুলি ছোড়া হয়। সেখানে কী পরিমাণ বিস্ফোরক বা গোলাবারুদ আছে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে জননিরাপত্তার স্বার্থে শিবগনগর ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে শিবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।
আবুর মা ফুলসানা বেগম জানান, আবু স্থানীয় চাত্রা মাদরাসায় লেখাপড়া করতো। তার বাবা অফসার আলী একজন দিনমজুর। নয় বছর আগে পার্শ্ববর্তী আব্বাস বাজার এলাকার সুমাইয়া বেগমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সে শ্বশুর বাড়িতে থাকতো। মাঝে মধ্যে বাড়ি আসতো দেখা করতে। তাদের দুই মেয়ে নূরী (৮) ও সাজিদা (৬)।
স্থানীয়রা বলছেন, বাড়ির মালিক ৭৫ বছর বয়সী জেন্টু বিশ্বাস মাস তিনেক আগে একই এলাকার আফসার আলীর ছেলে আবুকে ভাড়া ছাড়াই ওই বাসায় থাকতে দেন। আবু স্থানীয় বাজরে মসলা বিক্রি করেন।
এর আগে বুধবার সকালে কানসাট ইউনিয়নের আব্বাস বাজার এলাকার তিনটি বাড়ি ঘেরাও অভিযান চালালেও পুলিশ সেখানে জঙ্গিদের কাউকে পায়নি। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালানোর পর পুলিশ গত শুক্র ও শনিবার ঝিনাইদহের একটি বাড়ি ঘিরে অভিযান চালিয়ে ‘বিপুল বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম’ উদ্ধার করে। এরপর মঙ্গলবার দিনভর রাজশাহীর একটি এলাকায় কয়েকটি বাড়ি ঘিরে ‘ব্লক রেইড’ চলে। তবে সেখানে কোনো জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পায়নি পুলিশ।