গান বাজনা : ইসলাম কী বলে?
মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম
ইসলামের দৃষ্টিতে গান-বাদ্য হারাম। পাশাপাশি ক্রীড়া কৌতুকেরও রয়েছে এক নির্দিষ্ট সীমারেখা। কেননা গান-বাদ্য, ক্রীড়া কৌতুক মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখে এবং পাপাচার কাজে প্রেরণা যোগায়। মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘এক শ্রেণির লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তাকে (কুরআন) নিয়ে ঠাট্রা বিদ্রুপ করে তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’। (সুরা লুকমান-০৬) উক্ত আয়াতে অবান্তর কথা দ্বারা এমন কাজ বুঝানো হয়েছে যা মানুষকে আল্লাহর যিকির থেকে বিরত রাখে। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামগণের মতানুযায়ী এ কথার দ্বারা বিশেষভাবে ‘গান’ বুঝানো হয়েছে । হযরত ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির, ইবনে আবু শায়বা এবং বিশিষ্ট তাবিঈ আবু সাহবীও উপরিউক্ত মত পোষণ করেছেন। আবু সাহবা বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে এ আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন এর দ্বারা গানই বুঝানো হয়েছে। অন্যান্য তাফসির বিশারদগণও অবান্তর কথার ব্যাখ্যা গানই বুঝিয়েছেন । (তাফসিরে রুহুল মাআনী৭/৬৭ তাফসিরে মাযহারি-২/২৪ তাফসিরে কুরতুবী-১৪/৫১ তাফসিরে মাআরিফুল করআন-৭/৯) আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘তোমরা ক্রীড়া কৌতুক (গানবাজনা) করছো’ সুরা নাজম, আয়াত ৬১ :এ আয়াতে ‘সামিদ’ শব্দের অর্থও হলো গানবাজনা করা। রঈসুল মুফাসসির হযরত ইবনে আব্বাস রা. আয়াতের শেষাংশে ‘সামিদ’ শব্দের ব্যাখ্যা গানবাজনা বলেছেন ।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়ায দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদের আক্রমণ কর, তাদের অর্থ সম্পদ ও সন্তান সন্ততিতে শরীক হয়ে যা এবং প্রতিশ্রুতি দে। ছলনা ছাড়া শয়তান তাদের কোনো প্রতিশ্রুতি দেয় না’ (সুরা বনি ইসরাঈল-৬৪) উপরিউক্ত আয়াতের ‘ছাওত’ শব্দের অর্থ আওয়াজ। শয়তানের আওয়াজ কি এ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস রা. বলেন, গান বাদ্য, যন্ত্র, রং-তামাশার আওয়াজই শয়তানের আওয়াজ। এর মাধ্যমে সে মানুষকে সত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় । (তাফসিরে কুরতুবি ১০/২৯০ ও মাআরিফুল কুরআন ৭৮৩) হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, হযরত রাসুল সা. ইরশাদ করেন,‘গানবাদ্য শ্রবণ করা কবীরা গুণাহ এবং গানের অনুষ্ঠানে বসা ফাসিকী আর এর দ্বারা আন্দন্দানুভব করা কুফরি। (আবু দাউদ ৬৭৪ শামি ৬/৩৬৯) ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমার উম্মতের মাঝে এমন কিছু লোক হবে যারা ব্যাভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’। (বুখারি ২/৮৩৭) হযরত নাফে রা. বলেন, আমি একদা ইবনে ওমর রা. সাথে পথ চলছিলাম। তখন তিনি বাঁশীর শব্দ শুনলে তার আঙ্গুলদ্বয় কর্ণদ্বয়ে স্থাপন করলেন এবং রাস্তা ত্যাগ করে অন্য রাস্তায় অগ্রসর হলেন । কিছু দূরে গিয়ে বলেন, হে নাফে তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছ কি? আমি বললাম জ্বী না।
তখন তিনি আঙ্গুলদ্বয় কান থেকে সরালেন। অতপর বলেন, আমি একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন সাথে ছিলাম তখন বাঁশীর শব্দ শুনতে পেয়ে আমি যেমন করলাম তিনিও ঠিক তদ্রুপ করেন । (আবু দাউদ ৬৭৪) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘গায়ক ও গান শ্রবণকারীর ওপর আল্লাহর অভিশাপ । (তিরমিযি শরিফ) রাসুল। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘গান মানব অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে; যেমন পানি রবিশষ্য উৎপাদন করে’। (রুহুল মাআনী ৭/৬৮)
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,‘বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করার জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি’। (আবু দাউদ শরিফ-৬৭৪) ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই উম্মত ভূমিধস, উৎক্ষেপণ ও বিকৃতি সাধন হবে, যখন তারা মদ পান করবে, গায়িকা দ্বারা গানের আয়োজন করবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে’ (মুসাদে আহমদ, রুহুল মাআনী ৭/৭৬) তাই! আসুন আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে আদর্শ করে গড়ে তুলতে এসব পাপাচার কাজে নিজেও না জড়াই।এবং তাতে কোনোভাবে সহযোগীতা না করে বরং তার প্রতিকারে প্রতিবাদের হাতকে শক্তিশালী করি।আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুণ।