আগামী নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি জোট : ওবায়দুল কাদের
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে চমকপ্রদ নির্বাচনি ইশতেহারের কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এবারের ইশতেহারেও থাকবে নতুন চমক। আগামী ২০ মে দলের বর্ধিত সভায় ইশতেহার নিয়ে আলোচনা হবে। এরমধ্যে একটি ধারণাপত্র তৈরি হয়ে যাবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, এবারের ইশতেহার গতবারের চেয়েও চমকপ্রদ হবে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিএনপি বা বিএনপি গঠিত জোটকেই দেখছি। গতকাল দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, জনবিচ্ছিন্ন এমপিরা এবার টের পাবেন, মনোনয়ন নেওয়ার সময়। দলীয় এমপিদের পারফরম্যান্সসহ তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা, দলের বিভিন্ন স্তর এবং সভাপতির পক্ষ থেকে এমপিদের বিষয়ে তথ্য নেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদকদের বলা হয়েছে, অভিযুক্ত এবং বিচ্ছিন্ন এমপিদের সতর্ক করতে। তৃণমূলের ক্ষোভ নিরসনে প্রতিনিয়ত কাজ চলছে বলে জানান সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেও মনোনয়নে তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এবারও তৃণমূলের মতামতকে মূল্যায়ন করা হবে। এরমধ্যে এমপিদের কাছে খবর চলে গেছে। তাদের খারাপ কাজের দায়িত্ব দল নেবে না। এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার প্রধান মাপকাঠি হলো- জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং জনগণের সমর্থন। সরকার উন্নয়নের যে মহাসড়কে নিয়েছে দেশকে তাতে নির্বাচনের সমর্থন আমাদের পক্ষেই রয়েছে। এরমধ্যে যেসব এমপি এলাকায় যায়নি তাদের জন্য যাতে উন্নয়ন কর্মকা- ম্লান হয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রসহ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে কাজ করছেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপির মতো আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল নেই। ছোটখাটো যেসব সমস্যা ছিল তা অনেকটাই মিটে গেছে। সবচেয়ে আশার দিক হলো, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ। বিএনপির মতো বৈঠকে বসে মারামারি এবং পেছনের দরজা দিয়ে নেতাদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা আমাদের নেই। তারপরও তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে আমরা প্রতিনিধি সম্মেলন করেছি। যেসব স্থানে সমস্যা রয়েছে সেসব এলাকার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। কেন্দ্র থেকে তাদের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমি সব সময়ই সক্রিয় আছি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের যেখানে সমস্যা রয়েছে সেগুলোর সমাধান করা হবে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে দেশব্যাপী সফর কর্মসূচি করেছেন এবং করবেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, একটি বড় দল হিসেবে যতটা সমস্যা থাকার কথা আমাদের দলে তা নেই। এতগুলো প্রতিনিধি সম্মেলন করেছি কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়নি। আর বিএনপিতে অহরহ ঘটছে।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজের কাজের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, একজন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি সব সময়ই সক্রিয়। কাজ করতে গিয়ে সব সময় সব কাজ সঠিক হয় বলে আমি মনে করি না। একজন রাজনীতিক হিসেবে ভুল হতেই পারে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সফলভাবে অনেকগুলো প্রতিনিধি সম্মেলন সফলভাবে করেছি। যেখানে নেতৃত্বের দূরত্ব ছিল তা বসে আলোচনা করে সমাধান করেছি। কেউ বলতে পারবে না দল সরকারের মধ্যে হারিয়ে গেছে।
বিগত নির্বাচনগুলোতে সংসদে রাজনীতিকদের চেয়ে ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য পেশার মানুষের প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে বলে স্বীকার করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চেষ্টা করে স্থানীয় পর্যায়ের একজন গ্রহণযোগ্য নেতাকে মনোনয়ন দিতে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর থেকে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, তা একদিনে পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ এখন টাকা ছাড়া কোনো কর্মী কাজ করতে চায় না। মরমী রাজনীতিকদের জন্য এটা একটা সমস্যা হয়ে গেছে। বিএনপির হাওয়া ভবন, পাওয়া ভবন এসব করে রাজনীতিবিদদের জন্য নির্বাচন ব্যয়বহুল করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের কোনো টাকা কালেকশনের ভবন নেই। তবে বাস্তবতার নীরিখে প্রার্থী দেওয়া হয়। আমাদের কোনো মনোনয়ন বাণিজ্য নেই। সম্পাদনা : হুমায়ুন কবির খোকন