বিএনপির ভিশন-২০৩০ : মূল লক্ষ্য কী?
কাজী সিরাজ
গণতান্ত্রিক রাজনীতি হচ্ছে পারস্পারিক সহযোগিতা, সমঝোতা ও সহাবস্থান। এখানে যদি প্রতিহিংসা কাজ করে তাহলে সহাবস্থানটা থাকে না। সহাবস্থান না থাকলে সহযোগিতাও থাকে না। তাই সব মত, পথের মানুষকে একসঙ্গে, সম্মিলিতভাবে দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। যখন যেটা দরকার সেটা করতে হবে। এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থাকবে, মত ও পথের পার্থক্য থাকবে, তবে সকল মতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে।
বেগম খালেদা জিয়া দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। দেশবাসীর কাছে তিনি অতি পরিচিত একজন মানুষ। ৩ বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, দুইবার বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন। তিনি ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছেন। ওই ঘোষণায় তিনি দুটি কথা বলেছেন। একটা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে চাচ্ছেন, রাষ্ট্রপতির একক ক্ষমতা রাখতে চান না তিনি। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে আমরা গণতান্ত্রিক সংসদীয় শাসনে আসার পর প্রধানমন্ত্রীর শাসিত সরকার হলো। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য উনার সময়েও ছিল না। এখন উনি যদি এটা উপলব্ধি করে থাকেন জনগণ ও রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য তা মঙ্গলজনক নয় তাহলে এটা ভাল, একটা শুভ দিক।
এখন উনি কিভাবে এটা বাস্তবায়ন করবেন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কোন কোন জায়গায় কমাতে চান? প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত কি কি ক্ষমতা আছে? উনার অভিজ্ঞতা থেকে প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা থাকার ফলে রাষ্ট্র নির্মাণে দেশের কাজে কি কি অসুবিধা হয়েছে? উনি তো তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করা উচিত ছিল তার। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রীর কোন কোন ক্ষমতা উনি কমাতে চান? কোন কোন বিষয়ে রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা দিতে চান, এটা পরিষ্কার করে বললে ভাল হতো। আরেকটা হচ্ছে, উনি যে অঙ্গীকারগুলো করেছেন কিভাবে তা বাস্তবায়ন করবেন, বাস্তবায়ন করার প্রক্রিয়াটা কি হবে? কথা তো অনেক বলে দেওয়া যায়, অনেক লিফলেট লিখে দেওয়া যায়, অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া যায়। কিন্তু আমরা তো প্রতিশ্রুতি পালন করতে দেখি না।
প্রতিহিংসার রাজনীতি দেশটাকে শেষ করে দিচ্ছে। আমাদের দেশ অনেক এগিয়েছে। শিল্প-সংস্কৃতি, সামাজিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা প্রতিবেশী অনেক দেশ থেকে এগিয়ে গিয়েছি, তারা আমাদের পেছনে আছে অনেক ক্ষেত্রেই। এটা হঠাৎ করে, একদিনেই হয়নি। বর্তমান সরকারের আমলেই যে সব হয়েছে তা নয়, কিন্তু এই সরকার এটা নষ্ট হতে দেয়নি, পিছিয়ে যেতে দেয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ধীরে ধীরে চেষ্টা করতে করতে আজকের এই জায়গায় এসেছে। বিএনপির ভিশন-২০৩০-এর একটা ভাল দিক হচ্ছেÑ বিএনপির সম্পর্কে বাইরে একটা বিরূপ ধারণা রয়েছে। বিএনপি গোলমাল করে, ঝামেলা করে, অরাজকতা চায়, নির্বাচন চায় না। যেমন সরকারি দল থেকে একটা প্রচার আছে যে, বিএনপি নির্বাচন বিরোধী একটি দল।
বিএনপি আসলে একটি নির্বাচনমুখী দল। সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে তারা নির্বাচনে যাবে। তারা নির্বাচনি সড়কে হাঁটতে চায়Ñ এই ভিশন ঘোষণার মধ্যে দিয়ে তারই একটা বার্তা তারা দিলেন। আওয়ামী লীগ যেমন তাদের জাতীয় কাউন্সিল থেকে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছে, বিএনপিও ভিশন-২০৩০ মাধ্যমে নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এখন যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনের পক্ষে নেমে পড়েছেন, তিনি জনগণের কাছে ভোট চাচ্ছেন। বিএনপিও মূলত ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করে আবার নতুন করে নির্বাচনের পক্ষে একটা অবস্থান নিল, এটা শুভ লক্ষণ। এটা থেকে আমরা আশা করতে পারি, বাংলাদেশে আগামীতে একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।
বিএনপির এই ভিশন-২০৩০ ঘোষণার প্রতিক্রিয়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এই ভিশনে পৌঁছাতে পারবে না। এখন যদি বিএনপিও বলে আওয়ামী লীগের ২০২১ এবং ২০৪১ সালের যে ভিশন আছে, তারাও সেখানে পৌঁছাতে পারবেন না, তখন আওয়ামী লীগ কী বলবে? এগুলো আসলে রাজনৈতিক বিতর্ক।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান