সাইবার হামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় সরকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সমন্বিত প্রচেষ্টা
হুমায়ুন কবির খোকন : সাইবার হামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় সরকার। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। স্ব স্ব মন্ত্রণালয় তাদের অধীনস্ত দপ্তর ও সংস্থার নিরাপত্তার বিষয়ে দেখভাল করবে। গতকাল ধারাবাহিক সাইবার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় জরুরি বৈঠকে করে টেলিযোগাযোগ
মন্ত্রণালয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে টেলিযোগযোগ সচিবসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোন এ্যাটাক হয়নি। সরকার এই বিষয়ে সতর্ক এবং তা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্রমতে, সরকারের পক্ষ থেকে আজ-কালের মধ্যে এই বিষয়ে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরা হবে। সরকারি কোনও প্রতিষ্ঠানেও এখনও র্যানসমওয়্যার হামলার খবর পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সরকারের টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার।
সরকারের সূত্রমতে,সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-সহ সরকারের ২১টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এনবিআরসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে, আইসিটি মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে সহযোগিতা করছে।
সূত্রমতে,এ হামলার ভয়ংকর দিক হচ্ছে,রাষ্ট্রের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের অতি স্পর্শকাতর গোপন তথ্য চুরি হয়ে অন্যের হাতে চলে যেতে পারে। সাইবার হামলা চালিয়ে হ্যাকাররা অর্থ দাবী করছে। অনেকটা মুক্তিপণের মতো। রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষিত কম্পিউটারে সাইবার হামলা বা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হামলাকারিরা পুরো কম্পিউটার সিস্টেমকে অচল করে দেয়। তারপর বার্তা পাঠিয়ে অর্থ দাবী করে। গত শুক্রবার বিশ্বের প্রায় ১৫০টি’র অধিক উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন দেশে একযোগে সাইবার হামলা চালানো হয়। এতে বাংলাদেশেরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস ( বেসিস) এর সভাপতি মুস্তাফা জাব্বার বলেন,বিশ্বব্যাপি যে সাইবার হামলা হচ্ছে, তা থেকে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সরকার এই বিষয়ে বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও সহযোগিতা নিতে পারে। যেহেতু ১৫০’টির অধিক দেশে এ হামলা হয়েছে। তারা কিভাবে তা মোকাবিলা করেছে, তা থেকে পরামর্শ নেওয়া।
এই মুহুর্তে সরকারকে ৩টি জরুরি বিষয় দেখতে হবে। প্রথমত: সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটকে রক্ষা করার যা যা প্রয়োজন সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। দ্বিতীয়: সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগি হয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। তৃতীয়ত: এই বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণকে সচেতন করা এই বিষয়ে মোকাবিলা করার জন্য।
সফটওয়ার বিষেজ্ঞ আশিকুর রহমান বলেন, নিঃসন্দেহে সাইবার হামলা ভয়ংকর একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে রাষ্ট্রের কোনো গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুরক্ষিত থাকছে না। এসব গোপন তথ্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের হাতে চলে গেলে হামলার শিকার রাষ্ট্র অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হতে বাধ্য। এ যুদ্ধে যদি নিরাপত্তা প্রযুক্তি তথ্য সংরক্ষণে সফল না হয়, তবে সারা বিশ্বে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। ইতোমধ্যে তার নজির সৃষ্টি করা হয়েছে।
সাবেক একজন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ম্যানুয়েল পদ্ধতি উঠে যাচ্ছে। আগে কাগজ-কলমের মাধ্যমে যেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাইলবন্দি করে রাখা হতো, তা এখন কম্পিউটারের ফোল্ডারে সংরক্ষিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে যেমন দ্রুত কাজ সম্পাদন করা যায়,তেমনি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে সব তথ্য ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এর উপর নতুন উপদ্রব হিসেবে দেখা দিয়েছে সাইবার হামলা। প্রয়োজন শুধু সচেতনতার। বিশেষ করে আমাদের দেশের মতো প্রযুক্তির পথে হাঁটতে থাকা দেশকে অধিক সচেতন হওয়া জরুরী। প্রযুক্তি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তা বিনষ্ট বা বিকল করতে না পারে। এমন প্রযুক্তিও জোগাড় করে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের গাফিলতি করা যাবে না। আমাদের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় তথ্য-উপাত্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন থেকেই সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না।
ক্রাইম রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা তানভির হাসান জোহা জানিয়েছেন, রবিবার পর্যন্ত ৩০টির মতো অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এই সংখ্যা গতকাল আরও বেড়েছে। ব্যক্তিগত কম্পিউটারের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও টেলিভিশন (এশিয়া) চ্যানেল আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।