আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাপার জোটবদ্ধ দল প্রচারণায় নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় জোট রাজনীতি
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জোট রাজনীতি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। বড় তিন দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তাদের নির্বাচনী জোট নিয়ে বৈঠক করছে এবং জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়েও আলোচনা শুরু করেছে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের জোট সম্প্রসারন না করে ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য ধরে রাখতেই বেশি জোর দিচ্ছে। অপর বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি জোট সম্প্রসারন করতে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে গত দুই মাস ধরে।
এদিকে সরকারের সঙ্গে থাকা সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ৫৮টি দল নিয়ে একটি নতুন জোট গঠন করেছে এবং তারা জোটগতভাবে নির্বাচন করার কথা বলছে।
রাজনৈতিক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রেক্ষাপট এবার। আওয়ামী লীগ , বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি আসছে সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। আর এবার ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাপার জোটে যুক্ত হতে ধর্ণা দিচ্ছে। তবে এরমধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে যুক্ত হতে আগ্রহী অনেক দলই।
এ ব্যাপারে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জোট সম্প্রসারনের বিষয়ে আমরা এখনো আলোচনা করিনি। ১৪ দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই জোটের মধ্যে কঠিন ঐক্য রয়েছে। জোট নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই প্রার্থী ও নির্বাচনী কৌশল নির্ধারন করা হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৪ দল একটি ব্র্যান্ড। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। আমরা এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছি। জোট নির্বাচনে সক্রিয় এবং আগামীতে এই ঐক্য আরও শক্তিশালী হবে। কাদের বলেন, দলে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সংবিধান অনুযায়ী যথা সময়ে নির্বাচন হবে। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের জন্য সকলকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ করছেন।
দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এবার আসন বন্টন নিয়ে ১৪ দলের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। এবার গতবারের চেয়ে ১০টি আসন বেশি ছাড়তে হবে পারে। তবে সবই নির্ভর করছে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতির উপর এবং জাপার সিদ্ধান্তের উপর। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য অটুট রাখতে এই জোট গত সপ্তাহে বৈঠক করেছেন।
বিএনপি দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটও নির্বাচনী মাঠে সক্রিয়। তারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জোট সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরইমধ্যে দল পূনর্গঠনে ৫১টি টিম গঠন করা হয়েছে এবং জোট সম্প্রসারনসহ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় থাকার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র থেকে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে প্রার্থীর জরিপ করতে একটি থিংকট্যাংককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জোটভূক্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে এই থিংকট্যাংক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া যে সব দল বিএনপি জোটে আসতে চায় তাদের সঙ্গেও আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
এ বিষয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বড় একটি দলের নির্বাচনের প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। তিনি বলেন, বিএনপির তো একটা জোট রয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে এই জোটকে আমরা সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছি। গবেষণা সেল (থিংকট্যাংক) কাজ করছে। জোটের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিকভাবে হয়রানি না করলে নির্বাচন আমাদের পক্ষেই থাকবে।
এদিকে আগামি নির্বাচনে নিজেদের প্রধান দল হিসেবে ঘোষণা করলেও সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে সক্রিয় জাতীয় পার্টি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে মাঠে নেমেছে জাপা। দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
সম্প্রতি পার্টির সংসদীয় দলের সভায় দলীয় এমপিদের এলাকায় গিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫৮টি দল নিয়ে জোট করেছেন নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের একটি জাতীয় পার্টি। এই জোট আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩’শ আসনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে।