হাফসা ইসলাম
পৃথিবীর আলো আমরা প্রত্যেকেই দেখেছি দু’জন মানব-মানবীর মাধ্যমে ¯্রষ্টার অপার মহিমায় । আর এই দু’জন মানব-মানবী হলেন আমাদের মা-বাবা। ভূমিষ্ট হওয়ার পর মাটি স্পর্শ করার আগেই যার কোলে আমাদের বসবাস তিনি আমাদের সেই গর্ভধারীনী “মা”। কষ্ট শব্দটি সবসময় তার কাছে অপরিচিতই মনে হয়েছে । এই ভূম-লে আসার আগে ১০ মাস ১০ দিন তাকে অসহ্য যন্ত্রনা দিয়েছি আমরা । কিন্তু ভূমিষ্ট হওয়ার পর আমাদের মুখ দেখে এই মমতাময়ীর ভূবনভুলানো হাসি তার সব কষ্ট মুছে দেয় । নিজের জীবনের চেয়েও প্রিয় হয়ে যায় তার সন্তান। আর এই সন্তানের মাঝেই সে খোঁজে পায় পৃথিবীর সব সুখ। ছোট ছোট স্বপ্ন দেখতে থাকে নিজের ছেলে বা মেয়েটিকে নিয়ে । রাত-দিন, সময়, অসময় কিছুই বুঝে না অবুঝ সন্তান, নিজের প্রয়োজন হলেই কান্না আর মাকে জ্বালাতন। মায়ের মুখে কি তবুও একটু বিরক্তির চিহ্ন পাওয়া যায়? নিশ্চই না, কারণ এই সন্তানই যে তার কলিজার টুকরো । শত কষ্ট হাসি মুখে সহ্য করে তিলে তিলে এই অবুঝ শিশুটিকে বড় করে তোলে এই মা। কত শীতের রাত যে ভিজা বিচানায় নিজে ঘুমান আর কত রাত যে নিদ্রাহীন ভাবে কাটিয়ে দেন, তা শুধু এই মহামানবীই বলতে পারবে । পৃথিবীর বুকে এই একটি মানুষই আছে, যার ভালবাসা কখনো খ-ন করা যায় না। জীবনে চলার পথে প্রত্যেকটি মুহূর্তে একটি সন্তানের সাথী হয় এই মায়ের নি:স্বার্থ ভালবাসা আর অন্তরের গভীর থেকে আসা দোয়া । আর আমরা এই মমতাময়ী মায়ের সন্তানরা! আমাদের হৃদয়ে কতটুকু ভালবাসা লালিত হচ্ছে মায়ের জন্য? পড়া-লেখা, ব্যস্ততা আর কর্মজীবন এই সবকিছুর মাঝেই কি হারিয়ে যাবে মায়ের জন্য আমাদের ভালবাসা ? যান্ত্রিক জীবনের যাতাকলে পিষ্ট না হয়ে, আমরা কি পারি না এই নি:স্বার্থ মানুষটিকে কিছু সময় দিতে? মায়ের মুখের এক ফুটা হাসি আর হৃদয় নিংড়ানো প্রার্থনা বদলে দিতে পারে আমাদের হতাশাচ্ছন্ন, ক্লান্তিময় জীবনটিকে । ১. রাসুলে খোদা (সা) বলেছেন, বেহেশ্ত হচ্ছে মায়েদের পায়ের নিচে। ( কানযুল উম্মাল : ৪৫৪৩৯, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহ : ৬১৪ )
দুই. ইমাম সাদেক আ বলেছেন, এক লোক রাসুলের খেদমাতে এসে আরজ করলো হে রাসুল! খেদমত করবো কার? রাসূল বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি বললো-তারপর কার? রাসুল বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি বললো, তারপর? রাসূল বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি আবারো জিজ্ঞেস করলো তারপর কার? নবীজী বললেন, তোমার বাবার। ( আল-কাফি: ৯/১৫৯/২,মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ )