ধর্ষকেরা এত বেপরোয়া কেন?
তাজউদ্দীন হানাফী
২৮ মার্চ দ্য রেইনট্রি হোটেলে ঘটে বিভীষিকাময় ধর্ষণ কা-। দেশে ধর্ষণের এমন ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটে। চারপাশে খুন, গুম, ধর্ষণ সহ নানা অবিচার হলেও আমরা যেন কিছুই দেখি না! কিছুই জানি না। আমাদের এতে কিছু আসে যায়ও না! আমরা ক্রমেই স্বার্থপর হয়ে উঠছি। একটি অত্যাধুনিক হোটেলে দুটি মেয়েকে ধর্ষণ করছে নরপিশাচরা। কেউ এগিযে আসেনি তাদের বাঁচাতে। তাদের আর্তচিৎকার, কান্না রাস্তা থেকে শোনার কথা, কিন্তু কোথায় কেউ আসেনি তাদের বাঁচাতে। নাকি এই হোটেলে এইভাবে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের কান্না শুনে হোটেল বয়’রা অভ্যস্ত? এই সমাজ আজ ধর্ষক! কেউ নীরব ধর্ষক, আর কেউ সরব। এই সমাজে ধর্ষকের জয় হয়। ধর্ষিতা লাঞ্চিতা হয়। নীরব ভূবনে একাই কাঁদে। অভিশাপ দেয় ধর্ষক সমাজকে। এই ধর্ষণের কি আদৌ শাস্তি হবে? গ্রেফতার করা হয়েছে শাফাত ও সাদমানকে। উভয় ধর্ষক প্রভাব প্রতিপত্তিসম্পন্ন ব্যক্তি। একজন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত। অন্যজন রেগনাম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ জনির ছেলে সাদমান।
এই সমাজে ধর্ষক প্রভাবশালী হয়। তাই তো এই সমাজ ধর্ষকের। যে সমাজে ব্লেড দিয়ে কেটে যৌনাঙ্গের প্রবেশ পথ বড় করে রাতভর ধর্ষণ করা হয় দিনাজপুরের ৫ বছরের শিশু পূজাকে। সারারাত ধরে দুই জানোয়ার টানা ধর্ষণ করে সকালে বাড়ির কাছে ফেলে রেখে গিয়েছিল তাকে। বিচার হয়নি। বাকিটা ইতিহাস। কাছে রেললাইন থাকলে হয়তো পূজার বাবাও মেয়েকে নিয়ে সেদিন আত্মহত্যা করতেন। ছোট্ট ফাতেমা! কি দোষ ছিল তার? একটি ছোট শিশুকে তুলে নিয়ে গেল ধর্ষক, ধর্ষণ করল। বাবা বিচার চাইতে গেল থানায়। একহাজার টাকার বিনিময়ে পুলিশ কিনতে চাইল ফাতেমার হারানো ইজ্জত! রমজান আলী তার মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে ভালোই করেছেন। কারণ যে পুলিশের কাছে তিনি বিচার চাইতে গিয়েছিলেন সে পুলিশই তার দুইদিন পর এক মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রাতভর ধর্ষণ করে! এই দৃশ্য দেখলে রমজান আলী হয়তো দুইবার আত্মহত্যা করতেন।
এদেশে…সাঁওতাল ধর্ষিতা হলে সিনেমা হয়, পাহাড়ি ধর্ষিতা হলে আন্দোলন হয়, সংখ্যালঘু ধর্ষিতা হলে ঝড় ওঠে, নায়ক-নায়িকার কেলেঙ্কারিতে মিডিয়ায় চলে তোলপাড় আর পূজারা ধর্ষিতা হয়ে ঝরে যায়। আলীরা ন্যায়বিচারের অভাবে প্রাণ দেয় রেললাইনে। বিচারের বাণী এদেশে যেন নিভৃতে কাঁদে। শুধুমাত্র ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত ১৬০ শিশু ধর্ষিতা হয়েছে। এদের একটিরও যদি উপযুক্ত বিচার হতো তাহলে এদেশে এমন ঘটনা ঘটার হার কমত।
লেখক: প্রাবন্ধিক
সম্পাদনা: আশিক রহমান