বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা এখনো ভঙ্গুর রয়ে গেছে
ড. এম শামছুল আলম
সারাদেশে লোডশেডিং-এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পেছনে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে সে সবের বিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি খুবই দুর্বল। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা আছে ৯ হাজার মেগাওয়াট এবং সরবারহ করার ব্যবস্থা আছে ৯০০০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় সরবরাহের কোনো সমস্যা নেই। আসলে এ কথার কোনো ভিত্তি বা সঠিক নই। এমনকি আরও বলা হচ্ছে, অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা আমরা প্রতিবছর দেখি যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গ্যাসের অভাবে চালানো সম্ভব হয় না। তখন এ সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য সার কারখানাগুলো বন্ধ রেখে বিদ্যুৎ খাতের চাহিদা মেটানো হয়। আমরা কিন্তু এখনো এ জায়গায় থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। বিদ্যুতের উৎপাদন এখনো টেকসই হয়নি। উৎপাদন ব্যবস্থাটা এখনো ভঙ্গুর রয়ে গেছে। বিশ্বাসযোগ্য অবস্থায় এখনো যায়নি। অন্যদিকে আমরা তেল থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি, তেল বিদ্যুতের যে ক্ষমতা আছে তারা যদি এ সময়ে একসেস লোড নিয়ে বিদ্যুৎ চালায়, সারাদিনে এমনিতে পিক আওয়ারে দুই-তিন ঘণ্টা চলে। তারা যদি এ সময়ে লোড ক্যারি করে তাহলে তো এত লোডশেডিং হওয়ার কথা নয়।
সরকার ঢালাও ও অপরিকল্পিতভাবে লোড বাড়িয়ে দিয়েছে। লোড বৃদ্ধি এ বছরে প্রায় শতকরা ২০ শতাংশ হয়ে গেছে। উৎপাদনের সঙ্গে উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। গ্যাসের অভাবে আবার সরকারি মালিকানাধীন তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় বেশি পড়ছে। সেটাও অনেকটা রক্ষণশীল নীতি ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে উৎপাদনের বৃদ্ধির যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ইচ্ছা করলেই উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। আর গ্রাহকের চাহিদা হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেওয়া যৌক্তিক বিষয় হলো না। এই ভারসাম্যহীনতার কারণেই আজকের লোডশেডিংকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। লোডশেডিং তো দুর্ঘটনা নয়। অদূরদর্শিতা, অপরিকল্পিত এবং বেপোরোয়াভাবে লোড বৃদ্ধি করে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তা দুই-তিন বা চার-পাঁচদিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে? আর এটাকে টেকসই সমাধান বলব? সব সার কারখানা বন্ধ করে অথবা অন্য গ্রাহকের কাছ থেকে গ্যাস গ্রহণ করে সাময়িকভাবে স্বস্তি দেওয়া হলো। এটা তো কাম্য হতে পারে না। এ সমস্যাটা আমরা বছরের পর বছর জিইয়ে রেখে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালাচ্ছি, আর বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সাফল্য বা উন্নতি দাবি করছি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের দাবি করলেও এর ভিত্তিটা খুব শক্ত নয়। বিশেষ করে আমরা সমস্যা মোকাবিলা না করে জোড়াতালি দিয়ে কাজ করছি। সমস্যাকে আমরা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি। এটা তো টেকসই উন্নয়ন নয়। এতে আমাদের সমস্যা আরও বাড়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় বিদ্যুৎ খাত অপরিকল্পিত এবং অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অতিক্রম করছে। আজকে যে লোডশেডিং দেখছি তা হলো তার একমাত্র নিদর্শন।
পরিচিতি: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: আশিক রহমান