শহিদুল ইসলাম, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) : দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ২নং আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া আদিবাসী গ্রাম। ৫২টি পরিবারের ২৩০জন সব বয়সের আদিবাসী নারী ও পুরুষের বাস এই গ্রামে। শত বছরের অধিক সময় ধরে পৈত্রিক সূত্রে বসবাস করে আসছে আদিবাসী পরিবারগুলো।
আদিবাসী পরিবারগুলোতে সামাজিকতা রক্ষার অন্যতম অপরিহার্য দ্রব্য হচ্ছে মাদক। মাদক ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণ হয় না, মাদকের ব্যবস্থা না থাকলে অতিথিদেরকে অপমান করা হয়। এভাবেই গড়ে ওঠেছে ঐ গ্রামের আদিবাসীদের সমাজ ব্যবস্থা। আজ থেকে এক দশক আগেও ঐ গ্রামের আদিবাসী পুরুষরা বাড়িতে অলস সময় কাটাতো আর বাড়ির নারীরা ক্ষেতখামারে মজুরি দিয়ে আয় রোজগার করতো। দিনেরাতে চলতো মাদক তৈরি আর সেবন ও পানের আসর। মাদকের ছোবলে অনেকে এখন কিডনী, ফুসফুস, যকৃত সমস্যাসহ নানা প্রকার জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। আবার অনেকেই অকালেই মারা গেছেন। আদিবাসী পরিবারগুলোর কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদ ধারণা মাদক বিশেষ করে তাদের তৈরি পচানী বা চোলাইমদ (তাদের ভাষায় হাড়িয়া) তৈরি ও পান করা তাদের জন্মগত প্রথা । আর এগুলো না করলে সমাজ থেকে তারা দুরে চলে যাবে। এ ধারণা থেকেই আগে প্রতিনিয়ত চোলাইমদ তৈরি ও পান তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। সারাদিনে ভাত না খেলেও চোলাইমদ খেতেই হবে এমনই ছিল তাদের সমাজ ব্যবস্থা। বিয়েসহ ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠান হলে চোলাইমদ তৈরি ও পান চলতো অন্তত পাঁচদিন ধরে। এতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও থাকতো সমান তালে। কিন্তু এসব আদিবাসী পরিবারের ছেলেমেয়েরা যখন স্কুল ও কলেজে পড়াশুনা শুরু করে তখন থেকে তারা তাদের সমাজের কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদ ধারণা বদলানোর কাজ শুরু করে। এতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন ঐ গ্রামের সচেতন যুবক পাত্রাস কিস্কু। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান