তৃণমূলে নির্বাচনি হাওয়া জোটের শরিকদের নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ-বিএনপি
দেশের রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী । আগামী বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এমনই রোডম্যাপ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় সংসদের নির্বাচনের হ্ওায়া বইছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রধান সব রাজনৈতিক দলের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠমুখী । ফলে বাড়ছে নির্বাচনি উত্তাপ। নির্বাচনি আসন ভিত্তিক এলাকায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের রয়েছে নিজস্ব একাধিক প্রার্থী । নির্বাচনি মাঠে ইতিমধ্যে নেমে পড়েছে জোটের শরীক দলের প্রার্থীরাও। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি এখনই শরীকদের মধ্যে নির্বাচনি আসন ভাগবাটোয়ার নেপথ্যে হিসাব করছে । সূত্র জানিয়েছে, আগামী নির্বাচনে জোটের শরীকরা প্রধান দুই দলের কাছ থেকে বেশি আসন দাবী করবে। তাই শরীকদের সাথে আসন ভিত্তিক কিভাবে সমঝোতা হবে তা নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ-বিএনপি। এছাড়া তৃণমূলের দলীয় কোন্দল মিটিয়ে কিভাবে প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী দ্ওেয়া যায় তা নিয়েও হিসাব করছে প্রধান দুইটি দল।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আসছে ধরে নিয়েই নির্বাচনি ছক করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। চলছে একাধিক সংস্থা থেকে দলটির প্রার্থী বাছাইয়ের কার্যক্রম। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনি আসনে ছুটছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা ১৪ দলের শরীকদের সাথে আসন ভাগাভাগির বিষয়টাতে এখনই সমঝোতায় আসতে চায়। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা চিন্তিত অধিকাংশ শরীক দলের এমপিদের নিয়ে । বিভিন্ন সংস্থার পরিচালিত জরীপে শরীক দলের সংসদ সদস্যদের মাঠের বেহাল চিত্রই ফুটে উঠেছে। প্রতিটি আসনে শরীক দলের এমপির সাথে আওয়ামী লীগ নেতাদের দূরত্ব বেড়েছে। কোথাও তা প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বতে রূপ নিচ্ছে। আ্ওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করছে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্যরা আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়েই বিগত সময় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধেও তৃণমূলের আওয়ামী লীগ কর্মীদের একই অভিযোগ। এবার এসকল আসনে শরীক দল আবারও মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রার্থী স্বতত্ব হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারে।
আ্্াওয়ামী লীগের নির্বাচনি কৌশলে প্রধান শরীক জাতীয় পার্টি। গত ৭ মে জাতীয় পার্টি জাতীয় প্রেসক্লাবে ইসলামপন্থী ও জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন দল ও দুইটি জোট নিয়ে সম্মিলিত জাতীয় জোট নামে একটি নির্বাচনি জোটের ঘোষণা দিয়েছে। সূত্র জানায়, আ্ওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে নিয়ে কৌশলগত অবস্থান নিচ্ছে । বিএনপি নির্বাচনে কোনো কারণে না আসলে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির এ জোট দিয়ে তিনশ আসনেই প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়াবে। বিএনপি নির্বাচনে আসলে কৌশলগত সিট ভাগাভাগি করবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে অর্ধ শতাধিক সিট দাবী করতে পারে। তবে এ সরকারের শেষ দিকে জাতীয় পার্টির নিজস্ব অবস্থান কি হবে তা নিয়েও চিন্তিত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
কার্যত ভেতর থেকেই নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি । মাঠপর্যায়ে তাদের ৫১টি টিম কাজ করছে । গোপনে চলছে তাদের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ। শরীক দলের সাথে আসন ভাগাভাগির হিসাব। তবে বিএনপি চিন্তিত তার প্রধান শরীক জামায়াতে ইসলামকে নিয়ে। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলাম দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না । তবে আসন ভিত্তিক জামায়াতের প্রার্থীরা নির্বাচনি কাজ করে যাচ্ছে। জানা গেছে এ সকল প্রার্থী স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে লড়াইয়ে নামবে। সূত্র জানায় জামায়াত প্রভাবিক আসন বলে পরিচিত প্রায় ৫০টি আসনে তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দ্ওেয়ার জন্য বিএনপির উপর জামায়াত চাপ দিবে। এসব আসনে জামায়াত-বিএনপি প্রার্থীরা মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছে। এসকল আসন নিয়ে বিএনপির নীতি নির্ধারকেরা বেশ চিন্তিত । এছাড়া শরীক দল জাতীয় পার্টি ( কাজী জাফর ) খেলাফত মসলিশ, কল্যান পার্টি, বিজেপি, জমিয়তে উলামারে, জাগপা, ন্যাপ প্রায় আরো ৫০টি আসন বিএনপির কাছ থেকে দাবী করছে । ফলে তৃণমূলে বিএনপি জোটে বিরোধ বাড়ছে । শরীক জোট নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছে বিএনপির নীতি নির্ধারকেরা ।
তবে শরীকদের নিয়ে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ বেশি বেকায়দায় পড়েছে। তৃণমূলে শরীকদের সাথে বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৪ দলের ঐক্য অটুট রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। আমরা মনে করি এটাই হওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ঐক্য আরো দৃঢ় করতে হবে। এখন আওয়ামী লীগের কোনো জেলা বা মহানগর যদি দাবি করে সে জেলার সব আসন তাদের দিতে হবে তাহলে ধরে নিতে হবে তারা আসলে ১৪ দলের ঐক্যে ফাটল ধরাতে চায়। এর মধ্যদিয়ে তারা জামায়াত-বিএনপিকেই লাভবান করবে। আমি মনে করি, ১৪ দলের শরিকদের মর্যাদা ও আসন বুঝিয়ে দেওয়া আওয়ামী লীগের দায়িত্ব বেশি । তারা তা সরকার পরিচালনায় এবং নির্বাচনে আসন বন্টনে এ দায়িত্ব পালন করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামনে এগিয়ে নিতে আমরা এক সাথে পথ চলবো ।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিযাম সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহম্মদ নাসিম বলেন, দলীয় সাংগঠনিক ভিতকে দৃঢ় করে শরীক দলের ঐক্যকে প্রাধান্য দিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আমি মনে করি আগামী নির্বাচনে সংবিধান অনুসারে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভাবে চাইবেন সেভাবেই সরকার গঠিত হবে। আমি মনে করি বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অংশ নিবে। আমরা শরীকরা ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের পরাজিত করবো। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সকল শরীক দলের সাথে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সরকার পরিচলনা এবং নির্বাচনের কাজ চলছে বলে জানান ।
বিএনপি জোটের নির্বাচনি প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তাফা কামাল হায়দার বলেন, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি । আমাদের পার্টির অধিক সংখ্যক প্রার্থীর মনোনয়ন ন্ওেয়ার চেষ্টা করবো। তবে অনেক কিছু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপর নির্ভর করছে। আমরা এক সাথে আন্দোলন ও নির্বাচন করতে চাই।
বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল । নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। নির্বাচনের জন্য দল প্রস্তুত করতে বর্তমানে সারা দেশে কাজ চলছে। তবে আগামী নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার প্রয়োজন। তা না হলে জনগণ নির্বাচন মেনে নিবে না। আমরা সকলের সাথে আলোচনা করেই জোট পরিচালনা করছি এবং নির্বাচনের বিষয় সিদ্ধান্ত নিবো।
উল্লেখ্য, সংবিধান অনুসারে ২০১৯ সালের মার্চ মাসের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।