ব্লেইমগেমে রক্তস্রোত থামবে না
প্রণব সাহা
আচ্ছা যদি কল্পনায় ভাবি আগামী ২৫ জুলাই সরকার একটি জাতীয় ঐক্যের কনভেনশন আহ্বান করল এবং দেশবাসীকে অবাক করে দিয়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দেশের সবকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতৃবৃন্দ সেই কনভেনশনে যোগ দিলেন। তারা অঙ্গিকার করলেন, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। কর্মসূচি ঘোষিত হলো যে, ৬৪টি জেলায় সর্বদলীয় সমাবেশ হবে। এরপর যে যার সাংগঠনিক অবস্থান থেকে দেশজুড়ে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করবেন। হয়তো তাতে মানুষের মধ্যে জঙ্গিবাদবিরোধী একটি মতামত জোরদার হবে। কিন্তু আদৌ কি তাতে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব হবে?
দেশে এখন নানারকম সভা সমাবেশ হচ্ছে। আর নানাদিক থেকেই কথা হচ্ছে জাতীয় ঐক্য নিয়ে। এ ব্যাপারে যারা সোচ্চার তারা কি এই জাতীয় ঐক্য বলতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির মধ্যের একটি ঐক্য বা আলাপ-আলোচনার বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করছেন। ১৯৯১ সালে দেশে নতুন করে সংসদীয় গণতন্ত্রের সূচনা হলো, দুই যুগ পরে আমরা দেখছিÑ দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখন আর মুখ দেখাদেখির অবস্থাও নেই। ২০০৬ পর্যন্ত এই দুই প্রধান প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে আমরা সংসদে বসতে দেখেছি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশে সংসদ থাকল, সেখানে অনুপস্থিত বিএনপি। ফলে এই দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে এখন আর সমঝোতামূলক আলাপ-আলোচনাকে সোনার পাথরবাটির মতোই এক অসম্ভব বিষয় বলেই ধরে নেওয়া যায়।
প্রশ্নটা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলের বাইরের অতি রাজনৈতিক সচেতন একটি মহল কেন সেটিকেই ইঙ্গিত করে জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন। জঙ্গি এবং সন্ত্রাসবাদের যে কর্কটরোগে আক্রান্ত হয়েছে স্বদেশ তা থেকে উত্তরণে কি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী রাজনীতির বিরুদ্ধে আর যারা আছেন তাদের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসাটাই এখন জরুরি? নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষ কার্যক্রম এবং অতি অবশ্যই শক্তিশালী গোয়েন্দা তৎপরতাই সবার আগে দরকার। অবশ্যই জঙ্গি অভিযানের সঙ্গে যুক্ত বাহিনীগুলোর আধুনিকিকরণ, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধেŸ উঠে সঠিক অভিযানটাই শুধু পারে দেশবাসীকে জঙ্গি আতঙ্ক থেকে মুক্তি দিতে। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে প্রশাসনের সবাইতো জঙ্গিদমনে জিরো টলারেন্সের কথাই বলছেন বারবার। সরকারের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বাইরে যারা আছেন তাদের সে কথায় ভরসা এবং আস্থা তখনই বাড়বে যখন মানুষ দেখবে কথাকাজে মিল পাওয়া যাচ্ছে সর্বত্রই।
আর সরকার-প্রশাসনের বাইরে যারা তারা যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে জঙ্গিবিরোধী নিজ নিজ ভূমিকা পালন করেন তাহলেই শুধু এগোনো সম্ভব। সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলসহ সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর সেসব না করে ব্লেইমগেম আমাদের হলি আর্টিজান বা শোলাকিয়ার রক্তাক্ত স্রোত থেকে বেরুতে সাহায্য করবে না। আর একে অপরকে দোষারোপ করে হয়তো রাজনৈতিক মুনাফা কামাতে পারবেন কোনো কোনো দল। কিন্তু নিখোঁজ হয়ে যাওয়া দেশের তরুণদেরও যেমন ফিরে পাওয়া যাবে না, তাতে করে আবার ভবিষ্যতে নিখোঁজ হওয়াও ঠেকানো যাবে না। আর এসব ঠেকাতে ব্যক্তি, পরিবার, সংগঠন এবং সমাজ বা রাষ্ট্র কেউই তার দায় এড়াতে পারবে না।
লেখক : সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন