ব্রিটেনের নির্বাচনে আজ মুখোমুখি থেরেসা মে – করবিন
কামরুল আহসান: আজ সকাল ৭টা থেকে দুজন মানুষের প্রতিটি মিনিট হবে অন্যরকম। প্রচ- উত্তেজনায় কাটবে প্রতিটি মুহূর্ত। প্রতি মিনিটে ব্যালট বাক্সগুলো ভরতে থাকবে আর সঙ্গে সঙ্গে নির্ধারণ হবে তাদের ভাগ্য। বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আর প্রধান বিরোধী দলের নেতা জেরেমি করবিন মুখোমুখি হচ্ছেন আজ আগাম সাধারণ নির্বাচনে। ব্রেক্সিট বির্তক এড়াতে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা গত ১৮ এপ্রিল এ আগাম নির্বাচনের ডাক দেন। অথচ পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। এর মধ্যেই দু’দুটো নির্বাচন হলো শুধুমাত্র ব্রেক্সিট ইস্যুকে কেন্দ্র করে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ডেভিড ক্যামেরুন। কিন্তু, ২০১৬ সালের ২৩ জুন ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে কি, থাকবে না এই নিয়ে এক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে হেরে গিয়ে ডেভিড ক্যামেরুন ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তখন থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি তখন ক্যামেরুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এ বছর মার্চের ২৯ তারিখের পর ব্রেক্সিট ইস্যুকে কেন্দ্র করে আবারও এক জটিলতার সৃষ্টি হয়। বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন সংসদে ব্রেক্সিট নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেন এবং ক্ষমতাসীন দলকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনের বিভাজিত রাজনীতি কী হবে তা স্পষ্ট নয়। ব্রিটেনকে প্রায় একঘরে করে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তখন থেরেসা মে কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই হঠাৎ করে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার ঘোষণা দেন। তার এ ঘোষণায় অবাক হয়ে গিয়েছিল তার নিজের দলের লোকজনও। অবশেষে ৫২২ জন সাংসদের ভোটে জয়ী হয়ে আগাম নির্বাচনের অনুমোদন দেয় সংসদ। থেরেসা মে’র বক্তব্য ছিল, ব্রেক্সিট নিয়ে সারা জাতি এক থাকলেও বিরোধী দল এক নেই। বরং তারা এ নিয়ে জল ঘোলা করছে। তারা জাতিকে বিভক্ত করে ফেলছে। তাই ব্রেক্সিট ইস্যুকে পরিষ্কার করতে এই আগাম নির্বাচনের দরকার। তার আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ়সংকল্পে মুগ্ধ হয়েছিল সবাই।
এ পর্যন্ত হয়তো সবই ঠিক ছিল। কিন্তু হঠাৎ বিপত্তি বেঁধে গেল মাত্র এক সপ্তাহর ব্যবধানে লন্ডন এবং ম্যানচেস্টার শহরে দুটি সন্ত্রাসী হামলায়। ২২ মে ম্যানচেস্টার শহরে কনসার্টে বোমা হামলায় নিহত হয় ২২ জন, আর ৪ জুন লন্ডন ব্রিজে পথচারীদের উপর হঠাৎ অতক্রিত গাড়ি হামলায় নিহত হয় ৮ জন। তাতে নির্বাচনী প্রচারণা হঠাৎ করে থমকে পড়ে। দুদিন বন্ধ থাকার পর আবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নির্বাচন প্রচারণা শুরু হলেও শেষ মুহূর্তে উলট-পালট হয়ে যায় অনেক হিসেব। মাত্র ৫৫ দিনের নির্বাচনী প্রচারণায় অপ্রত্যাশিতভাবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে জনপ্রিয়তার কাতারে থেরেসা মে’র কাছাকাছি চলে আসেন জেরেমি করবিন। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, কনজারভেটিভ দলের জনপ্রিয়তা ৪৪ শতাংশ আর লেবার পার্টির জনপ্রিয়তা ৩৭ শতাংশ। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে করবিনের জনপ্রিয়তা খুব দ্রুত বেড়েছে। পর পর দুটি সন্ত্রাসী হামলাও তার জনপ্রিয়তা বাড়ার পেছনে কাজ করেছে। কারণ ম্যানচেস্টার হামলার পর করবিন ভয়াবহ এক সন্ত্রাসবিরোধী বক্তব্য দেন, যা তার নিজের দেশকে পর্যন্ত কাঁপিয়ে ফেলেছে। করবিন দ্যর্থহীনভাষায় বলেন, আমাদের যুদ্ধবাজ নীতিই এই সন্ত্রাসী হামলার মূল কারণ। আমাদের সরকার সন্ত্রাস দমন করছে না, বরং আরো উসকে দিচ্ছে। যদিও থেরেসা মে তার কথার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু, তরুণপ্রজন্ম লুফে নিয়েছে করবিনের এই বক্তব্য। নিবন্ধনের শেষদিন দলে দলে তরুণেরা নির্বাচনে ভোট দিতে নিবন্ধিত হয়। ৪০ বছর বয়সের নিচে তরুণদের মধ্যে করবিনের জনপ্রিয়তা প্রায় ৬৯ শতাংশ। তবে শেষ মুহূর্তে কতজন তরুণ ভোট দিতে আসে তাই আজ দেখার বিষয়। কারণ ব্রিটিশ নির্বাচনে সাধারণত বেশি ভোট দেয় বেশি বয়ষ্ক, অবসরপ্রাপ্ত এবং যাদের বয়স ৬০-এর অধিক তারা। কিন্তু, এবার হিসেব অন্যরকম। বলা হচ্ছে এবার প্রথমবারের মতো বিশাল সংখ্যক তরুণ ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছে এবং তারা সবাই প্রায় জেরেমি করবিনের সমর্থক। তরুণরাই পাল্টে দিতে পারে এবারের নির্বাচনের ফলাফল।
সে যাই হোক, ফলাফল জানা যাবে আজ মধ্যরাতের মধ্যেই। স্থানীয় সময় রাত ১০টায় ভোটগ্রহণ শেষ হবে। ঘন্টায় ঘন্টায় ফলাফল প্রকাশ করবে প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যগুলো।
যদিও আরো অনেক দল আছে তবে এবারের নির্বাচনটা হচ্ছে প্রধানত দুজন প্রার্থীর মধ্যেই। জেরেমি করবিন আর থেরেসা মে। এমকি নিজেদের দলের চেয়েও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তাদের ব্যক্তিত্ব। তাই বলা হচ্ছে এ যেন এক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই হচ্ছে।
বিবিসি, গার্ডিয়ান, মিরর, উইকিপিডিয়া