নীতি-নৈতিকতা না পড়ায় তরুণরা জঙ্গি হচ্ছে : বারাকাত
আমির পারভেজ : বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও কেন জঙ্গি তৎপরতায় জড়াচ্ছেন সে প্রশ্নের জবাব খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত। তার ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইতিহাস, দর্শন, নীতি-নৈতিকতা না পড়ানোর কুফল এটি।
গুলশানে অভিজাত রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপান স্টাডি সেন্টার আয়োজিত শোকসভায় এই অর্থনীতিবিদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘অতীতে জঙ্গিবাদ শুনলেই মাদ্রাসা শিক্ষার দিকে তাকিয়েছেন। এখন দেখা যাচ্ছে ইংরেজি মিডিয়াম থেকে শুরু করে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরও জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলছে। ঘটনাটা কী?’।
গত ১ জুলাই গুলশান হামলা ও ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর জানা যায়, হামলাকারীদের একটি বড় অংশ সচ্ছ্বল ও উচ্চশিক্ষিত পরিবারের সন্তান। আরও জানা যায়, কয়েকশ মানুষ বাড়ি ছেড়ে নিখোঁজ হয়েছেন। এদের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণের সংখ্যা বেশি থাকলেও চিকিৎসক, শিক্ষক বা অন্য পেশাজীবীও আছেন বেশ কয়েকজন। এমনকি পরিবারের সব সদস্য নিয়েই অজ্ঞাত স্থানে চলে যাওয়ার খবর প্রকাশ হচ্ছে। এদের বেশিরভাগই বিদেশে জঙ্গি তৎপরতা বা প্রশিক্ষণে জড়িয়েছেন বলে সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায় নাম এসেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বা সাবেক বেশ কিছু ছাত্র ও শিক্ষক উগ্রবাদে জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি আরও কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পাওয়া যাচ্ছে।
আবুল বারাকাত বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদে করণীয় বিষয়ে আমি অতীতে একটি বই লিখে সতর্ক করেছিলাম। তখন আমার বিভাগের কিছু শিক্ষক এটাকে ‘অতিকথন’ বলেছিলেন। অথচ মৌলবাদের অর্থনীতি এখন হারে হারে টের পাওয়া যাচ্ছে’। বারাকাত বলেন, ‘এই আইএস, আল কায়েদার পেছনে কারা এদের খুঁজে বের করতে হবে’।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠক্রম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আবুল বারাকাত। তিনি বলেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মূলধারা শিক্ষার সঠিক পাঠ দেওয়া হয় না। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘মানুষ সৃষ্টি’র বিষয়ে কোনো পাঠ্য নাই। বাণিজ্যিক উদ্দেশে স্থাপিত এসব প্রতিষ্ঠানে দর্শন শাস্ত্র, ইতিহাস বা নীতি-নৈতিকতা পড়ানো হয় না। তাহলে মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে তথাকথিত মূলধারা শিক্ষার পার্থক্য কী?’।
আর্টিজানে খুন হওয়া ১৭ বিদেশির মধ্যে সাত জনই জাপানি। হামলার সময় রেস্টুরেন্টে থাকা অপর এক জাপানি একটি গাছের আড়ালে পালিয়ে বাঁচেন। শোকসভায় নিহত জাপানি নাগরিকদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান বক্তারা। বলেন, কেবল জাপানি বলে কথা নয়, গোটা হামলাই ছিল মর্মান্তিক। বিদেশিদের হত্যা করে জঙ্গিরা ভীতি সঞ্চার করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের উন্নয়নে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো যেন তারা এগিয়ে না আসে সেটাই চেয়েছিল জঙ্গিরা। কিন্তু তাদের সে উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে।
আর্টিজানে সাত জাপানিকে হত্যার পর জাপানে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এই ঘটনায় বাংলাদেশে জাপানি সহায়তা সংস্থার কার্যক্রম সীমিত হতে পারে, এমন খবরও প্রকাশ হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। পরে অবশ্য দেশটির সরকার জানায়, বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম সীমিত হবে না। বরং আরও বাড়বে। আর কেবল বাংলাদেশি নয়, বাংলাদেশে কাজ করা সব বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপরেই গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আর্টিজান হামলার প্রতিবাদে ‘ছাত্র-শিক্ষক প্রতিবাদী শোকসপ্তাহ’ পালনের ঘোষণাও দেওয়া হয় শোকসভায়। কর্মসূচির মধ্যে আছে বুধবার বেলা ১২টায় গুলশানের হলি আর্টিজানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, পরদিন সন্ধ্যা ছয়টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিহতদের স্মরণে প্রার্থনা এবং ২৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে আলোচনা সভা। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ