সৌদি আরবকে দুটি দ্বীপ দেওয়ায় অসন্তোষ বাড়ছে মিসরে
পরাগ মাঝি: সৌদি আরবকে দুটি দ্বীপের মালিকানা দিয়ে দেওয়ায় মিশরীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। এ সপ্তাহেই দ্বীপ হস্তান্তরের বিরোধীতা করে আন্দোলনরত কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে দেশটির সরকার। লোহিত সাগরে অবস্থিত দুটি দ্বীপই জনবসতিহীন।
গত বুধবার মিশরের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের বেশিরভাগ সংসদ সদস্য লোহিত সাগরে অবস্থিত তিরান ও সানাফি নামে দুটি দ্বীপ সৌদি আরবের কাছে হস্তান্তরের পক্ষে রায় দেয়। গত বছরের এপ্রিল মাসে মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি দ্বীপগুলিকে সৌদি আরবের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর করেছিলেন। যদিও সেসময় তা দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলো।
দ্বীপ হস্তান্তরের বিরোধীতা করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিশরীয় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় অন্তত ৮ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। ২০১৪ সালে আল-সিসি মিশরের ক্ষমতায় আসার পর এটিই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। চুক্তি অনুযায়ী ৬ বছরের মধ্যে দ্বীপ দুটি সৌদি আরবের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হবে। সৌদি ও মিশরীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বীপ দুটি আসলে সৌদি আরবের। ১৯৫০ সালে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজ আল সৌদ মিশরকে দ্বীপদুটি দেখে রাখতে বলেছিলেন বলেই এগুলো মিশরের নিয়ন্ত্রণে ছিলো।
মিশরীয় পার্লামেন্টের দ্বীপ হস্তান্তরের চুক্তিটি অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায়ই মিশরীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। দেশটির নাগরিকদের দাবি, স্কুলের পাঠ্য বইয়ে তারা পড়েছে যে, ওই দ্বীপ দুটি মিশরের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে বেশ তোলপাড় শুরু হয়। ‘আওয়াদ তার জমি বিক্রি করে দিয়েছে’ এমন হ্যাশট্যাগ দিয়ে বিভিন্ন লেখা আসতে শুরু করে। এটি মূলত মিশরের একটি জনপ্রিয় গানের বক্তব্য, যেখানে বলা হয়েছে, আওয়াদ নামে এক মিশরীয় অত্যন্ত লজ্জাজনক প্রক্রিয়ায় নিজের জমি বিক্রি করে দিয়েছিল।
২০১১ সালের এক গণঅভ্যুত্থানে দেশটিকে ৩০ বছর ধরে শাসন করে আসা একনায়ক হোসনি মুবারকের পতন হয়। তারপর থেকে অর্থনীতির গতি ফিরিয়ে আনতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে মিশরকে।
মুবারকের পতনের পর মিশরের ইতিহাসের প্রথম অবাধ, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ইসলামপন্থি মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রার্থী মুহাম্মদ মুরসি জয়লাভ করে প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু ২০১৩ সালে গণঅসন্তোষের সুযোগে দেশটির সেনাবাহিনী মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর পরপরই মুসলিম ব্রাদারহুডবিরোধী সৌদি আরব মিশরকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরানোয় নেতৃত্ব দেওয়া তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দেল ফাত্তা আল সিসিই এখন মিশরের প্রেসিডেন্ট। তাই অনেক মিশরীয় সন্দেহ করছে, দ্বীপ দুটোকে সৌদি আরবের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্স ২৪