লন্ডনের রাস্তায় ভ্যান হামলায় নিহত বাংলাদেশি নাগরিক, আহত ১০
রাশিদ রিয়াজ : উত্তর লন্ডনের একটি মসজিদ থেকে নামাজ শেষে মুসল্লিরা বের হয়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরতেই একটি সাদা ভ্যান এসে তাদের ওপর আঘাত হানে। এ হামলায় নিহত হয়েছে এক বাংলাদেশি বৃদ্ধ নাগরিক। তার পরিচয় জানা যায়নি। এ হামলায় ১০ জন আহত হয়। ৮ জনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের মধ্যে নামাজে আগত নারীরাও রয়েছেন। তবে নামাজ পড়ে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হয়ে আসার সময় ওই বৃদ্ধ অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। তার শুশ্রুষা করতে আশেপাশের কয়েকজন যখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখনই ভ্যানচালক সেখানে ভ্যানটি তাদের ওপর তুলে দেন। ভ্যানের আঘাতেই ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানাচ্ছে, তারা গুরুতর আহত অন্তত আটজনকে এবং অপেক্ষাকৃত কম আহত দুজনকে ঘটনাস্থলে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। আহতদের পরে রাজধানীর তিনটি হাসপাতালে নেয়া হয়। নিহত ব্যক্তি বাংলাদেশি বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানিয়েছে টেলিগ্রাফ। প্রত্যক্ষদর্শীদের একজনের ভাতিজা সুলতান আহমেদ জানান, নিহত ব্যক্তি ছিলেন একজন বয়স্ক বাংলাদেশি। তিনি সেভেন সিস্টার্স রোডে অবস্থিত মুসলিম ওয়েলফেয়ার মসজিদে রোববার সন্ধ্যায় ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন।
সুলতান আহমেদ বলেন, ‘আমার চাচা মাত্র মসজিদ থেকে বের হয়ে এগোচ্ছিলেন। এমন সময় তার সামনে থাকা একজন বয়স্ক লোক অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। তখন সেখানে থাকা মুসল্লিদের অনেকেই ওই লোকের চারপাশে ভীড় করেন তাকে সাহায্য করার জন্য। ঠিক সেই সময়েই ওই ভীড়ের ওপর উঠে পড়ে গাড়িটি।’
কাভার্ড ভ্যানের ওই অতর্কিত হামলায় মাটিতে শুয়ে থাকা বৃদ্ধ সাথে সাথেই মারা যান বলে জানান সুলতান আহমেদ। অন্য কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, হামলা চালানো ওই ভ্যানটি নামাজ শেষ করে লোকজন বের হওয়ার অপেক্ষায় বেশ কিছুক্ষণ ধরেই রাস্তার এক পাশে পার্ক করা ছিল।
খালিদ আমিন নামে প্রত্যক্ষদর্শী একজন বিবিসিকে জানান, ঘটনার সময় হামলাকারী ব্যক্তিকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘আমি সব মুসলিমকে হত্যা করতে চাই’। পুলিশ বলছে, ৪৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ভ্যানটি চালিয়ে পথচারীদের ওপর উঠিয়ে দেন এবং হামলাকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই প্রথম কোনও ব্যক্তি যাকে সাধারণ জনতা আটক করে এবং পুলিশের কাছে তুলে দেয়ার জন্য অপেক্ষা করে। এরপর তাকে হাসপাতালে নেয়া হয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এরপর তাকে কাস্টডিতে নেয়া হবে।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা অনেকেই বলছেন, এ হামলার পেছনে একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে তারা মনে করেন। যদিও সন্দেহভাজন অন্য কোনও ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়নি । তবে পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে তাদের খোঁজ-খবর চলছে।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে অভিহিত করে বলেন, এটি ব্রিটিশ মুসলিমদের ওপর হামলা। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এ হামলাকে সন্ত্রাসী ঘটনা হিসেবে মন্তব্য করে বলেন, সহিষ্ণুতা ও স্বাধীনতার ওপর এটি এক বিরাট আঘাত। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর ও মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। হামলার পরপরই রাস্তায় নামাজ আদায় করেন অনেক মানুষ।
উত্তর লন্ডনের ফিনসবারি এলাকার সেভেন সিস্টারস সড়কে এ হামলার পর জরুরি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে তার বয়স ৪৮ বছর এবং সে শ্বেতাঙ্গ ও ক্লিনড শেভ করা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, সাদা রংয়ের ভ্যানটি এসে মসজিদ থেকে বের হয়ে আসা মুসল্লিদের ওপর আঘাত হানে। মেট্রোপলিটন পুলিশ এ হামলাকে বড় ধরনের ঘটনা বা ‘মেজর ইনসিডেন্ট’ বলে ঘোষণা করেছে।
ফিন্সবারি পার্ক মসজিদের নেতা মোহাম্মদ কোজবার এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, যেই এ হামলা যারা বা যেই করুক তা মানুষের ওপর ঘৃণ্য হামলার জন্যে করা হয়েছে এবং এটি সন্ত্রাসী হামলা। ম্যানচেষ্টার,ওয়েস্টমিনিস্টার ও লন্ডন ব্রিজে হামলার মতই এটি একটি সন্ত্রাসী হামলা।
স্থানীয় বাসিন্দা সিনথিয়া ভ্যানজেলা স্কাই নিউজকে জানান, প্রচ- হৈ চৈ শোনার পর বিছানা থেকে উঠে জানালা দিয়ে দেখতে পাই অনেক মানুষ সেখানে সন্ত্রস্ত হয়ে ভীষণভাবে চিৎকার করছে। আমি বুঝতে পারি সেখানে কোনো খারাপ ঘটনা ঘটেছে। ২ ব্যক্তি রাস্তায় পড়ে আছে এবং নড়াচড়া করতে পারছে না। মানুষ তাদের বুকে চাপ বা ‘কার্ডিয়াক ম্যাসেজ’ দিচ্ছে।
ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিল বলছে, ফিন্সবারি পার্কের কাছে মসজিদ থেকে নামাজিরা বের হবার পরই তাদের ওপর ভ্যান হামলা ঘটনানো হয়। ডেইলি মেইল বলছে, ভ্যানটি এসে মুসল্লিদের ওপর আছড়ে পড়লে বেশ কয়েকজন মাটিতে পড়ে যায়। ওই মসজিদে বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা আবু হামজা এক সময় বক্তব্য রাখতেন। টুইটারে এঘটনাকে একাধিক ব্যক্তি মুসলমানদের ওপর একটি হামলা বলে অভিহিত করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভ্যানচালককে মুসল্লিরা ধরে ফেলে এবং উত্তম মধ্যম দিতে থাকে। পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার ও আটক করে। এ্যাম্বুলেন্স এসে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ও স্বাস্থ্যকর্মীরা গুরুতর আহতদের তাৎক্ষণিক সেবা দিতে থাকে।
এসময় পুলিশের একটি হেলিকপ্টার সেখানে চক্কর দিতে থাকে ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনায় সাহায্যের আবেদন জানান অনেকে। পুলিশের আটক ব্যক্তিকে ঘিরে অনেকে চিৎকার করতে থাকে। হামলাকারীর ভ্যানটি ওয়ালসের একটি প্রতিষ্ঠান ‘পন্টাক্লান’ থেকে ভাড়া করা হয়েছিল।
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড বলেছেন, এই হামলাকে পুলিশ ‘একটি সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবেই দেখছে। কাউন্টার টেররিজম সদস্যরা এর তদন্ত শুরু করেছে।