বিশিষ্টজনদের অভিমত ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত হওয়া উচিত
উম্মুল ওয়ারা সুইটি, রফিক আহমেদ ও আল হেলাল শুভ : শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত চান বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, আমরা চাই ইউনূসের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। বিশেষ করে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতি বন্ধে বিদেশি বন্ধু বা প্রভাবশালী দেশকে নাক গলানোর যে সুযোগ দিয়েছেন তার শাস্তি হওয়া উচিত।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, তিনি যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে তদন্ত কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন এবং তদন্ত থেকে ইউনূসকে বাদ দিতে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হুমকি দিয়েছিলেন। এর বিচার হওয়া উচিত। তারা বলেন, ইউনূস সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব কথা বলেছেন সবকিছু তথ্যভিত্তিক। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগীয় সিনেটও তদন্ত করছে। ইউনূস এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন, তাই নামমাত্র বিবৃতি পাঠাচ্ছেন। সময় সাপেক্ষে সবই প্রমাণিত হবে।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, যত বন্ধুই হোক একটি স্বাধীন দেশের তদন্তে প্রভাব খাটাতে পারে না অন্য কোনো দেশ। সরকারের পক্ষ থেকে এখন বিষয়টি তদন্ত করা উচিত। বিশেষ করে দেশকে বিপন্ন করার যে ষড়যন্ত্র করেছেন ড. ইউনূস তার জন্য জনগণের সামনে তার মুখোশ উন্মোচন করা উচিত। ভবিষ্যতে কেউ যেন এই ধরনের কাজ করতে না পারে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে মার্কিন সিনেট তদন্ত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারও তদন্ত দরকার। ইউনূসের বিষয়ে কেন তাদের এত আগ্রহ ছিল? এর পেছনে আর কি কি ষড়যন্ত্র রয়েছে তাও বেরিয়ে আসবে। এটা খুঁজে বের করতে হবে ইউনূসের সঙ্গে দেশের আর কারা যুক্ত রয়েছেন?
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগের ঘটনা তদন্ত করে তা উদঘাটন করা উচিত। আমাদের রাজনীতিতে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ করানোর ঘটনা মোটেও কাম্য নয়। ড. ইউনূস চাঁদা হিলারিকে দিয়েছেন এবং প্রভাব খাটিয়েছে এসব ঘটনার অবসান হওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ড. ইউনূস যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন তাহলে তিনি তদন্ত বন্ধ করতে বিদেশি প্রভাবশালী বন্ধুকে দিয়ে সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করতেন না। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন বলে যে বিবৃতি দিলেন তা সত্য নয়। কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে তিনি আদালতে মামলা করে হেরেছেন। তারপরও তিনি বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। আসলে ইউনূসের সঙ্গে এদেশের মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই তিনি বিবৃতি পাঠিয়ে বিদেশি বন্ধুদের জানান দিচ্ছেন যে তিনি দায়ী নন। তাদের কখনোই দেশের সংকটে পাওয়া যায় না। মার্কিন সিনেটের তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে এলে জনগণ বুঝবে ইউনূস কতটা রাষ্ট্র বিরোধী মানুষ।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ড. ইউনূস বাংলাদেশে একজন অজনপ্রিয় ব্যক্তি। তার এই নোবেল অর্জন নিয়েও অনেক নেতিবাচক কথা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। সেই তদন্ত বন্ধ করতে তিনি হিলারির প্রভাব খাটিয়েছেন। আমরা আশা করি, মার্কিন সিনেটের তদন্তে সবকিছু পরিষ্কার হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের এই স্বাধীন তদন্তে হিলারি তার অবস্থান থেকে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিলেন কিনা, সে বিষয়ে দেশটির বিচার বিভাগীয় সিনেট কমিটি দীর্ঘদিন পর এই তদন্ত শুরু করল। সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান চাক গ্রাসলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনকে হিলারির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু করতে বেশ কিছু বিষয়ে তথ্য চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন।
একজন নোবল বিজয়ী হয়ে তিনি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে বিদেশি রাষ্ট্রের প্রভাব আনা অভিযোগের তদন্ত বন্ধ করতে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত না করতে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাব খাটানোর অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বিচার বিভাগীয় সিনেট গত সপ্তাহেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সম্পাদনা : হুমায়ুন কবির খোকন